What's new

Sheikh Mujibur Rahman Murder Case - A Legal Perspective

Eid er porei andolon

awami al-cowda like yourself, did not realize, andolon already started.

Mujib ur Rahman double standard politics was cause of his downfall. Man advocated democracy while was a contender but did total opposite as man incharge.

Played heavily for his misdeed.

his daughter is same, two face liar and a brutal dictator. Like shekh mujib line hasina.

Mujib was a brilliant politician

"brilliant politician" for being a murderous dictator, sure; NOT for welbeing of people of Bangladesh. sheikh mujib killed thousands of political opponents from Jasood and left leaning parties using genocidal force he created called rakkhi bahini. That is why, JSD leader Inu celebrated sheikh mujib demise riding on tank. His son tried to loot Bangladesh bank at gunpoint but Bangladesh Army foiled that. Now his daughter and grandson looted Bangladesh bank "digitally" by taking the SWIFT code at gunpoint.
 
awami al-cowda like yourself, did not realize, andolon already started.



his daughter is same, two face liar and a brutal dictator. Like shekh mujib line hasina.



"brilliant politician" for being a murderous dictator, sure; NOT for welbeing of people of Bangladesh. sheikh mujib killed thousands of political opponents from Jasood and left leaning parties using genocidal force he created called rakkhi bahini. That is why, JSD leader Inu celebrated sheikh mujib demise riding on tank. His son tried to loot Bangladesh bank at gunpoint but Bangladesh Army foiled that. Now his daughter and grandson looted Bangladesh bank "digitally" by taking the SWIFT code at gunpoint.
Tibro andolon hocche?
 
Mujib got what he deserved,I wish same for current breed of Pakistani politicians.
 
Kamal has been killed, send Forces urgently: BB to Shafiullah.
কামালকে মাইরা ফেলছে, জলদি ফোর্স পাঠাও : শফিউল্লাহকে বঙ্গবন্ধু

327359_1.jpg

05 Aug, 2017


পাখ–পাখালির আওয়াজে নয়, ওই দিন রাতের নীরবতা ভাঙে ঘাতকের মুহুর্মূহু গুলির শব্দে। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট। বিপদগামী সেনাদের হাতে আক্রান্ত স্বাধীনতার স্থপতির ধানমন্ডির বাড়ি।

দিশেহারা তবুও স্থিরতায় অটুট থেকে বঙ্গবন্ধু টেলিফোন করলেন ওই সময়ের সেনা প্রধানকে। বললেন, ‘শফিউল্লাহ তোমার ফোর্স আমার বাড়ি এ্যাটাক করেছে । কামালকে বোধহয় মাইরা ফেলছে। তুমি জলদি ফোর্স পাঠাও ।’

১৯৮৭ এবং ১৯৯৩ সালে দুটি সাক্ষাৎকারে তৎকালীন (১৯৭১ সালের ১৫ আগস্ট)সেনাবাহিনী প্রধান শফিউল্লাহ এসব তথ্য উল্লেখ করেছিলেন। বঙ্গবন্ধুর অনুরোধের জবাবে সেনাপ্রধান সফিউল্লাহ বলেছিলেন, ‘আমি কিছু একটা করার চেষ্টা করছি। পারলে আপনি বাড়ি থেকে বেরিয়ে যান।’

তবে বঙ্গবন্ধুকে উদ্ধারের জন্য সেনাপ্রধান সফিউল্লাহ সেনা পাঠানোর কোনো উদ্যোগ নেননি বলে প্রচার রয়েছে। যে কারণে ওইদিন সেনাপ্রধানের ভূমিকা নিয়েও নানা প্রশ্ন রয়েছে খোদ আওয়ামী লীগের মধ্যেও।

আজ ৫ আগস্ট। হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙ্গালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জ্যেষ্ঠ পুত্র শেখ কামালের ৬৮তম জন্মদিন। ১৯৪৯ সালের এই দিনে শেখ কামাল তদানীন্তন গোপালগঞ্জ মহকুমার টুঙ্গীপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের কালরাতে মাত্র ২৬ বছর বয়সে সপরিবারে নিহত হন তিনি।

যোগ্য সংগঠক আর বহুমাত্রিক প্রতিভার অধিকারী, তারুণ্যের দীপ্ত প্রতীক শেখ কামাল শাহীন স্কুল থেকে মাধ্যমিক ও ঢাকা কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগ থেকে বি.এ. অনার্স পাস করেন। বাংলাদেশের শিল্প, সাহিত্য, সংস্কৃতি অঙ্গনে শিক্ষার অন্যতম উৎসমুখ ‘ছায়ানট’-এর সেতার বাদন বিভাগের ছাত্র ছিলেন তিনি

তিনি ছিলেন ঢাকা থিয়েটারের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা। অভিনেতা হিসেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্যাঙ্গনে প্রতিষ্ঠিত ছিলেন। শৈশব থেকে ফুটবল, ক্রিকেট, হকি, বাস্কেটবলসহ বিভিন্ন খেলাধুলায় প্রচণ্ড উৎসাহ ছিল তাঁর। তিনি উপমহাদেশের অন্যতম সেরা ক্রীড়া সংগঠন, বাংলাদেশে আধুনিক ফুটবলের প্রবর্তক আবাহনী ক্রীড়াচক্রের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন। সেই সময়ের জনপ্রিয় সাংস্কৃতিক সংগঠন স্পন্দন শিল্পীগোষ্ঠীরও প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন তিনি।

শেখ কামাল স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম ওয়্যারকোর্সে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত হয়ে মুক্তিবাহিনীতে কমিশন লাভ ও মুক্তিযুদ্ধের প্রধান সেনাপতি জেনারেল ওসমানির এডিসি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। স্বাধীনতার পর শেখ কামাল সেনাবাহিনী থেকে অব্যাহতি নিয়ে লেখাপড়ায় মনোনিবেশ করেন।

তিনি বাংলাদেশ ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্য ছিলেন এবং শাহাদাত বরণের সময় বাংলাদেশ কৃষক শ্রমিক আওয়ামী লীগের অঙ্গ-সংগঠন জাতীয় ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ছিলেন। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট শাহাদাত বরণের সময় তিনি সমাজবিজ্ঞান বিভাগের এমএ শেষ পর্বের পরীক্ষা দিয়েছিলেন।
http://www.newsonbd.net/newsdetail/detail/200/327359

Tibro andolon hocche?
AL 2.jpg
 
Sheikh Kamal fired first.
শেখ কামালই প্রথম গুলি চালিয়েছিলেন

screenshot-www.google.com-2017-08-05-13-35-11.png

শেখ কামালই প্রথম গুলি চালিয়েছিলেন

বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথম নৃশংস রাজনৈতিক হত্যাকান্ডটি ঘটেছিল ১৯৭৫ এর সেই ভয়াল ১৫ আগস্ট রাতে। ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে যখন সেনাবাহিনীর কতিপয় সেনারা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে পরিবার পরিজনসহ হত্যা করতে আক্রমণ করে, ঠিক তখনই ভিতর থেকে প্রতিরোধের চেষ্টা করেছিলেন শেখ কামাল এবং একজন পুলিশ কর্মকর্তারা। দুজনই গোলাগুলিতে নিহত হয়েছিলেন। হয়তো এ প্রতিরোধ না হলে ঘটনা অন্যরকমও হতে পারতো।


তবু একটা কথা বলতেই হচ্ছে-সেনাবাহিনীর সামনে ওই সময় পাল্টা গুলি চালানোর সাহসটা তিনি দেখিয়েছেন। আজ শেখ কামালের জন্মদিন। মহান মুক্তিযুদ্ধা এবং স্বাধীন বাংলাদেশের অন্যতম সেরা ক্রীড়া সংগঠক শেখ কামালের জন্মদিনের নিরন্তর শুভেচ্ছা, শ্রদ্ধা আর বিনম্র ভালোবাসা। ওপারে ভালো থাকুন শেখ কামাল।

লেখক: গণমাধ্যমকর্মী
http://rtnews24.net/national/73174
 
বঙ্গবন্ধুর গোসল কাফন হতো না, যদি…
Bongobondhu funeral rites wouldn't take place,if

Picture120170807081438-660x330.jpg

কাজী সিরাজুল ইসলাম

বাংলাদেশের স্থপতি তিনি। কিংবদন্তি এই নেতার জন্ম না হলে বিশ্ব মানচিত্রে লেখা হতো না স্বাধীন বাংলাদেশের নাম। সারাজীবন তিনি শুধু দিয়েই এসেছেন দেশকে, বিনিময়ে শেষ পর্যন্ত জীবনটাই দিতে হয়েছে মহান এই নেতাকে। তিনি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।অথচ মৃত্যুর পর স্বাধীন বাংলাদেশের এই স্থপতির দাফনের আগে গোসল ও কাফন হওয়া নিয়েই ছিলো চরম সংশয়। কারণ, যেসব অমানুষ জাতির জনককে হত্যা করে কলঙ্কিত করেছে ইতিহাসকে, তাদের পরিকল্পনায় ছিলো যত দ্রুত সম্ভব বঙ্গবন্ধুর মরদেহ দাফন করা যায়। কিন্তু একজন কাজী সিরাজুল ইসলাম সেটি হতে দেননি।

বাংলাদেশ পুলিশে সে সময়ে কনস্টেবল হিসেবে কর্মরত এই সাহসী মানুষ বঙ্গবন্ধুর লাশের সামনে দায়িত্বপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তার সামনে বলেছিলেন, ‘মরদেহের গোসল করাতে হবে।’ আর তিনিই তা করাতে চান।অথচ পরিকল্পনা ছিলো, লাশ গোসল ছাড়াই কবরে নিয়ে যাওয়ার। সে অনুযায়ী কবরও খুড়ে ফেলা হয়েছিলো। কিন্তু কাজী সিরাজুল ইসলাম অসীম সাহস নিয়ে পরম মমতায় জাতির জনককে গোসল করালেন। নিজেই নামলেন কবরে। সেখানেও যত্ন নিয়ে মরদেহ রাখলেন অন্তিম শয়নে। দুখঃজনক, লোমহর্ষক, আবেগে স্তব্ধ করা সেই পরিবেশ পরিস্থিতির কথা রাইজিংবিডির এই প্রতিবেদককে জানিয়েছেন কাজী সিরাজুল ইসলাম নিজেই।

সেই কাহিনীই পড়ুন তার বর্ণনায় …

’৭৫-এ আমি তখন বাংলাদেশ পুলিশে কর্মরত। গোপালগঞ্জে পোস্টিং। গোপালগঞ্জ সাব ডিভিশন পুলিশ অফিসার (এসডিপিও) আবদুল মান্নানের দেহরক্ষী হিসেবে কর্মরত ছিলাম (কনস্টেবল নম্বর ২০৭৩)।

কিছুদিন ধরেই প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম ফরিদপুর যাবো, নতুন পোশাক আনতে। ডিউটি না থাকায় ১৪ আগস্টের দিন আমি কাপড় আনতে ফরিদপুর যাই। তখন আমাদের কাপড়, রেশন, বেতন সবই ফরিদপুর থেকে দেওয়া হতো। পোশাক নিয়ে চলে আসার আগে ভাবলাম গোপাল সরদারের চায়ের দোকানে একটু যাই। গোপাল আমাদের গ্রামের ছেলে। ফরিদপুরে তার একটি চায়ের দোকান আছে।

সেখানে গিয়ে বন্ধু লুলু শিকদারের (একই গ্রামের বাসিন্দা) সঙ্গে দেখা। ওর সাথে দেখা হওয়ায় কোনোভাবেই আমাকে আসতে দিলো না। আমাকে বললো, আজ যেতে পারবা না। মালেক ভাইয়ের (আবদুল মালেক, একই গ্রামের বন্ধু) বাসায় ভাবি নাই, বাসা ফাঁকা আমরা সারারাত তাস খেলবো। মনিও (মনি মিয়া, গ্রামের আরেক বন্ধু) আছে। আমি এতো বললাম স্যারকে বলে আসি নাই, আমার যেতে হবে। কিছুতেই শুনলো না।

ওই রাতে চার বন্ধু হোটেলে খেয়ে মালেক ভাইয়ের বাসায় গিয়ে তাস খেলতে শুরু করলাম। রেডিও শুনছি আর তাস খেলছি। রাত গভীর হলে আমরা এক খাটের ওপরই যে যেভাবে পেরেছি শুয়ে পড়েছিলাম। কিন্তু কারো রেডিও আর বন্ধ করতে মনে ছিলো না।

হঠাৎ রাত আড়াইটা-পৌনে তিনটার দিকের ঘটনা। আমার তখনও ভালো করে ঘুম আসেনি। হঠাৎ রেডিওতে বুলেটিন দিচ্ছে ‘স্বৈরাচার শেখ মুজিবকে হত্যা করা হয়েছে।’ দুইবার শোনার পর আমি মালেক ভাইকে ডাকলাম, ‘ও মালেক ভাই ওঠেন, দেখেন তো কে কারে হত্যা করছে? আমি কি ঠিক শুনছি? কি আবোল তাবোল বলছে।’ আমি কিংকর্তব্যবিমুঢ় হয়ে গিয়েছিলাম খবরটা শুনে। সবাইকে জাগালাম। এক মিনিট দেড় মিনিট পর পর একই বুলেটিন দিচ্ছে। তখন বুঝলাম তিনি (জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান) আর নাই। এর মধ্যে আমার হাত-পা কাঁপা শুরু করেছে। আমাদের চারজনের কারো বিশ্বাসই হচ্ছিল না যে এমন ঘটনা ঘটেছে। যিনি আমাদের আলাদা একটি জাতিসত্ত্বা উপহার দিলেন তাকেই হত্যা করা হলো…কীভাবে সম্ভব?

হঠাৎই আমার মনে হলো আমি তো ফরিদপুরে। এখন স্যার (গোপালগঞ্জ সাব ডিভিশন পুলিশ অফিসার আবদুল মান্নান) যদি আমাকে খোঁজে তাহলে কি হবে? এই অবস্থায় আমার চাকরি নিয়েও ভয় পেয়ে গেলাম। কারণ, বঙ্গবন্ধু যদি মারা যান, তাহলে তো আমার এসডিপিও’র কল পরবে। আমি বললাম, ভাই আমার আর এক মিনিটও বসে থাকার সময় নাই। এখনই গোপালগঞ্জের দিকে রওনা দিতে হবে। কিন্তু এই রাতে কীভাবে যাবো তা নিয়ে বন্ধুরা চিন্তায় পড়ে গেলো।

রাত তখন তিনটার মতো বাজে। ওই অবস্থায় পুলিশের পোশাক পরে রওনা দিলাম। তখনকার সময়ে যোগাযোগ ব্যবস্থার অবস্থা খুবই খারাপ ছিলো। অনেক কষ্ট করে কখনো ট্রাক, কখনো হেটে, কখনো লঞ্চে করে গোপালগঞ্জ এসে পৌঁছালাম। সেখানে পৌঁছে সোজা বাসায় চলে আসি। তখন ভোর হয়েছে। বাসায় এসে স্ত্রীর কাছে জানতে চাইলাম, কেউ আমাকে খুঁজতে আসছিলো কি না? কেউ আসেনি শুনে একটু যেন হাফ ছেড়ে বাঁচলাম।

তখন সকাল সাড়ে ৭টা। এরই মধ্যে পুলিশ এসে বাসায় হাজির। তারা বললো, ‘সিরাজ ভাই তাড়াতাড়ি আসেন, এসডিপিও স্যার আপনারে ডেকে পাঠিয়েছেন।’ তখন আমি তাড়াতাড়ি পোশাক পড়ে স্যারের কাছে গেলাম। পরে সেখানকার ম্যাজিস্ট্রেট আবদুল কাদের সাহেব, এসডিপিও স্যার এবং আমি একটি স্পিড বোটে চড়ে চলে আসলাম টুঙ্গিপাড়ায়। বঙ্গবন্ধুর মরদেহ তখনও আসেনি। আমরা টুঙ্গিপাড়া থানায় অপেক্ষা করছিলাম। এরই মধ্যে জানতে পারলাম বঙ্গবন্ধুর জন্য কবর খোড়ার কাজ হচ্ছে।

আনুমানিক বেলা ১০টা-১১টার দিকে বঙ্গবন্ধুর মরদেহ হেলিকপ্টারে করে নিয়ে আসা হলো। মরদেহের সঙ্গে একজন মেজর আর একজন সিপাহী দেখতে পেলাম। হাসপাতাল ও পুলিশের লোক মরদেহ শেখ সাহেবের বাড়িতে নিয়ে আসলো। মরদেহের কফিনের কাঠ চারপাশ থেকে কঠিন করে পেরেক দিয়ে আটকানো ছিলো। শাবল এনে পেরেক উঠিয়ে কফিন খোলা হলো। দেখলাম মরদেহ চা পাতি আর বরফ দিয়ে ঢাকা। বঙ্গবন্ধুর মরদেহ সাদা একটি কাপড়ে মোড়ানো। কাপড়টি কাফনের কাপড় নয়, এমনি একটি কাপড়।

তখন আমি ওই মেজর সাহেবের কাছে জানতে চাইলাম, ‘স্যার, লাশের তো গোসল হয়নি মনে হচ্ছে।’ মেজর সাহেব কিছুটা রাগান্বিত স্বরে বললেন, ‘কে কার গোসল করাবে।’ আমি বললাম, ‘স্যার কবর যখন খেঁাঁড়া হয়েছে, মুসলমান হিসেবে তাকে গোছল দিতে হবে, কাফন দিতে হবে, তারপর দাফন করতে হবে।’ তখন উনি আমার ওপর একটু রেগে গিয়ে বললেন, ‘আপনার বাড়ি কোথায়।’

তিনি ভেবেছিলেন, আমি বোধ হয় বঙ্গবন্ধুর আত্মীয় হবো। আমি বললাম, ‘নড়াইল জেলার লোহাগড়া থানার ইতনা গ্রামে।’ উনি বললেন, ‘দেরি করলে লাশ ছিনতাই হয়ে যেতে পারে।’ আমি বললাম স্যার, ‘১৪৪ ধারা জারি আছে। ১৯ জেলার ফোর্স দিয়ে টুঙ্গীপাড়া ঘেরাও করা আছে। লাশ ছিনতাইয়ের কোনো সুযোগ নাই।’ তিনি বললেন, ‘গোসল কে করাবে আর কত সময় লাগবে।’ আমি বললাম, ‘স্যার আমি করাবো। আধাঘণ্টার মধ্যে হয়ে যাবে।’ তখন অনুমতি দেওয়া হলো।

এখন কাফনের কাপড় দরকার। তখন আমাদের গ্রামের একজন নাম মোকলেছুর রহমান, উনি ওই টুঙ্গীপাড়া থানায় সেকেন্ড অফিসার ছিলেন। উনি আমাকে বললেন, ‘তোমার কাপড় আনতে যাওয়া লাগবে না। আমি নিয়ে আসছি। তুমি গোসল করাও।’ বঙ্গবন্ধুর পড়নে ছিলো পাঞ্জাবি আর লুঙ্গি। এই অবস্থায় বঙ্গবন্ধুর একজন চাচাতো চাচা সেখানে আসলেন উনার নাম মান্নান। তাকে বললাম, একটি বালতি আর বদনা নিয়ে আসেন। উনি দুইটা টিনের পুরোনো বালতি আর পুরোনো সিলভারের একটি বদনা নিয়ে আসলেন। এরই মধ্যে কাপড়ও নিয়ে আসা হলো।

দু:খের কথা কি বলবো, কাফনের জন্য যে কাপড় পাওয়া গেলো সেটি মার্কিন থান। লাল পাড়ের সাদা কাপড়। এগুলো ছিলো মহিলাদের জন্য রিলিফের কাপড়, যেগুলো হাসপাতালে থাকতো। অনেক সময় বেওয়ারিশ লাশের কাফন হতো এগুলো দিয়ে। দুটো কাপড় আনা হয়েছিলো। আমি বললাম, ‘স্যার এই দুটো কপড় দিয়ে হবে না।’ কাপড় আরেকটি লাগবে। কারণ, সেগুলো আড়ে (প্রস্থ) কম ছিলো।’ পরে কাপড় জোড়া দিয়ে কাফনের জন্য প্রস্তুত করা হলো। কাপড়ের সঙ্গে গোসলের জন্য একটি ৫৭০ কাপড় কাচার সাবানও আনা হলো। তখন আমার এতো খারাপ লাগলো এই ভেবে যে, বঙ্গবন্ধুকে গোসল করাতে হবে কাপড় কাঁচা সাবান দিয়ে! বঙ্গবন্ধুকে গোসল করাচ্ছি ভেবে তৃপ্তি পাচ্ছি, কিন্তু যেভাবে তিনি মৃত্যুবরন করলেন আর যেভাবে তার দাফন গোসল হচ্ছে; দু’চোখ দিয়ে পানি চলে আসে তখন।

বঙ্গবন্ধুকে গোসল করাতে গিয়ে আমি তার পাঞ্জাবি খুলে দেখলাম কোথাও ইনজুরির দাগ নাই। তাহলে গুলি লাগছে কোথায়? ভালো করে লক্ষ্য করে দেখলাম, বুকের বামপাশে লাল লাল তিনটা ছোট ছিদ্র। বুঝলাম এখানেই গুলি লাগছে। আরেকটা গুলি ডান হাতের শাহাদত আঙ্গুলে লাগছিলো। এই আঙ্গুলটা গুলি লেগে উল্টে গেছে। উনি তো ওই আঙ্গুলটা উচিয়েই কথা বলতেন। পাঞ্জাবি খোলার জন্য যখন ওনাকে একটু পাশ ফেরালাম, তখন দেখলাম পিঠে পেছনের চামড়ার বিভিন্ন অংশ ছিড়ে বেশ খানিকটা অংশ নিয়ে গুলি বের হয়ে গেছে। সেখানে চামড়ার তিনটা আলাদা স্তর তৈরি হয়ে গেছে। তখন কাফনের কাপড় সেলাই করার জন্য যে বড় সুই আনা হয়েছিলো, তা দিয়ে চামড়াগুলো এক করে সেলাই করলাম। একজন ধরলো, আর আমি সেলাই করলাম। এরপর জাতির জনককে গোসল করালাম আমি নিজ হাতে।

এখন কাফন দেবো, কিন্তু দেখলাম যেখানে সেলাই করেছি, সেখান থেকে রক্ত পানি হয়ে বের হচ্ছে। তখন অতিরিক্ত একখ- কাপড় দিয়ে সেলাইয়ের জায়গায় ধরছি আর কাপড় রক্তে লাল হয়ে যাচ্ছে। এইভাবে কয়েকবার রক্ত পরিস্কার করার পর একটু কমলে কাফন দিলাম। পরে বঙ্গবন্ধুর মরদেহ দাফনের জন্য কবরের কাছে নিয়ে আসলাম। এখন কবরে নামবে কে? নামার লোক নাই। সেখানেও আমি নামলাম। ‘জাতির জনকের মরদেহ আমি নিজ হাতে কবরে রেখেছি। আমি ধন্য।’ পরে দোয়া পড়ে কবর থেকে উঠে আসলাম।

এর আগে বঙ্গবন্ধুর জানাজা হলো। জানাজায় ২০-২৫ জন লোক ছিলাম। পাবলিককে তো সেখানে আসতে দেয়নি। পুলিশ স্টাফ আর হাসপাতালের যে কয়জন লোক ছিলো তারাই জানাজা পড়লো।

কবরে বাঁশের স্তর দিয়ে ঢেকে দেবো, এমন সময়ে কয়েকজন মহিলা হঠাৎ করেই ওই মেজর সাহেবের হাত-পা ধরে কান্নাকাটি করছে যে, তাদের যেন একবার বঙ্গবন্ধুর মুখটা শেষ বারের জন্য দেখতে দেওয়া হয়। মেজর সাহেব বললেন, ‘না এখন দেখানো যাবে না।’ তখন আমি এগিয়ে গিয়ে জানতে চাইলাম, ‘আপনাদের বাড়ি কোথায়?’ তারা জানালো, ‘কাউলি পাড়া।’ আমি বললাম, ‘স্যার ১০-১২ মাইল রাস্তা এরা কষ্ট করে আসছে চোখের দেখা দেখবে বলে।’ তখন সে বললো, ‘কে দেখাবে?’। তখন আমি বললাম, ‘স্যার আমি দেখাবো।’ মেজর সাহেব আমার ওপর কিছুটা ক্ষেপে গিয়ে বললেন, ‘আপনি তো আচ্ছা লোক। লাশ আসছে পর থেকে আপনি লেগেই আছেন এর পেছনে।’ তখন আমি আবার কবরে নেমে লাশের মুখ দেখাচ্ছি। মুখ দেখে উনারা হাউমাউ করে কাঁদা শুরু করেছে। আমি বললাম কান্না কইরেন না। ওনার জন্য দোয়া করেন। বঙ্গবন্ধুর পরনে যে কাপড় আর লুঙ্গি ছিলো সেটি ওনার চাচা মান্নানের কাছে দিয়ে দিলাম।

সব আনুষ্ঠানিকতা শেষে যখন চলে আসছিলাম সবকিছু স্বপ্নের মতো মনে হচ্ছিল। আমার বিশ্বাসই হচ্ছে না বঙ্গবন্ধুকে কেউ হত্যা করতে পারে। যে লোকটা স্বাধীনতা এনে দিলো … কি করে সম্ভব! এতো খারাপ লাগছিলো, আর কান্না আসছিলো বলে বোঝাতে পারবো না। আরো খারাপ লাগছিলো এই ভেবে যে, এতো বড় একজন মানুষের দাফন হলো এভাবে?

রাইজিংবিডি
http://monitorbd.news/2017/08/07/বঙ্গবন্ধুর-গোসল-কাফন-হতো/
 
12:00 AM, August 14, 2017 / LAST MODIFIED: 03:05 AM, August 14, 2017
PM requests Canada to deport Noor
hasina_169.jpg

Unb, Dhaka

Prime Minister Sheikh Hasina yesterday asked the Canadian government to extradite Noor Chowdhury, one of the self- proclaimed killers of Father of the Nation Bangabandhu Sheikh Mujibur Rahman.

"One of the convicted killers of Bangabandhu is now residing in your country, extradite him," she told outgoing Canadian High Commissioner Benoit-Pierre Laramee at her office.

The PM's press secretary Ihsanul Karim briefed reporters after the meeting.

He said the Canadian high commissioner said he would convey this to his government.

During the meeting, Laramee said his country wants to see an inclusive election in Bangladesh. "You need to have stability as Bangladesh is heading towards becoming a middle-income country in the next two years," he said.

The prime minister said the Awami League government assuming power in 1996 restored the rights of the people, which were absent after Bangabandhu's assassination in 1975.

She mentioned that the AL government introduced the transparent ballot box for election. Before the 10th general election she proposed formation of an election-time coalition government "but the BNP didn't respond to that proposal”, she said.

Hasina said her government was working hard for the welfare of the country's 16 crore people.

Appreciating Hasina's role in different international forums, the Canadian envoy said Bangladesh was also advancing in various sectors in the country. "Bangladesh has advanced a lot in education and health sectors...this is a very commendable job indeed."

He said Canada would continue its assistance to Bangladesh in various development sectors.

Laramee also said Canada is one of the countries in the world that recognised Bangladesh after its independence. "We have our hearts for Bangladesh. The relation between the two countries is growing steadily."

http://www.thedailystar.net/frontpage/pm-requests-canada-deport-noor-1448245
 
‘আমরা বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক পতন চেয়েছি ও রক্তাক্ত বিরোধিতা করেছি’-জাসদ
15/06/2016মূলধারা বাংলাদেশ
jsd.jpg



লন্ডনে Moinuddin Badal MP’s Exclusive interview,BanglaTribune, Jun 14, 2016

‘মুজিবের রক্তাক্ত বিরোধিতা করেছি, পতন চেয়েছি’
তানভীর আহমেদ, লন্ডন জুন ১৪, ২০১৬

ce92d782063cb21fb95c5a73d49135d5-57603abde172c.jpg

১৯৭২ থেকে ৭৫ সাল পর্যন্ত জাসদের ভূমিকা, বঙ্গবন্ধু সরকারের বিরুদ্ধে রক্তাক্ত বিরোধিতা এবং বিপ্লবের জন্য জিয়াউর রহামানকে নির্বাচন করা যে কর্নেল তাহেরের ভুল সিদ্ধান্ত ছিলো সে বিষয়ে খোলামেলা কথা বলেছেন জাসদ নেতা মঈন উদ্দিন খান বাদল। একইসঙ্গে জোট সরকারের মন্ত্রী হাসানুল হক ইনু ও জাসদের ভূমিকা নিয়েও তিনি বেশ কিছু চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছেন।

জাসদের শরীফ নুরুল আম্বিয়া অংশের কার্যকরী সভাপতি ও চট্টগ্রাম ৮ আসনের এ সংসদ সদস্য সম্প্রতি লন্ডন সফরের সময় চ্যানেল এস টেলিভিশনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এসব তথ্য দেন। চ্যানেলটির ‘অভিমত’ অনুষ্ঠানে প্রচারিত সাক্ষাৎকারটি গত ২২ ফেব্রুয়ারি গ্রহণ করেন বাংলা ট্রিবিউনের বিশেষ প্রতিনিধি তানভীর আহমেদ। সমসাময়িক অবস্থা বিবেচনায় সাক্ষাতকারটি বাংলা ট্রিবিউনের পাঠকদের জন্য হুবহু তুলে ধরা হলো।

জাসদের গণবাহিনীর ভূমিকা নিয়ে বিভিন্ন সময়ে অভিযোগ এসেছে, আপনি কি বিষয়টি পরিষ্কার করবেন?

বাদল: এগেইন আই উইল গো টু মাই পার্লামেন্ট। আমরা ৭২ থেকে ৭৫ পর্যন্ত সরকারের বিরোধিতা করেছি, প্রচণ্ড বিরোধিতা করেছি, রক্তাক্ত বিরোধিতা করেছি। সেই বিরোধিতায় আমরা সরকারের পতনও চেয়েছি। সেই চাওয়ার প্রক্রিয়ায় আমরা মরেছি এবং মেরেছি। এই যে বাহাত্তর থেকে পঁচাত্তর, দ্য পলিটিকস অব জেএসডি ও অন্যদের পলিটিকস, হুইচ ইজ রাইট, হুইচ ইজ রং। এটা ইতিহাসকে সিদ্ধান্ত নিতে দেন। আমি এর বাইরে কোনও মন্তব্য করবো না।

৭২ থেকে ৭৫ পর্যন্ত আপনারা যে সরকারের বিরোধিতা করলেন, সেই আদর্শের সরকারে আপনারা এখন অংশীদার কেমন করে?

বাদল: ৭২ থেকে ৭৫ পর্যন্ত জাসদ যে একদলীয় সরকারের বিরোধিতা করেছিলো, সেই একদলীয় শাসন ব্যবস্থা নিশ্চয়ই এখন নেই। জাসদের ওই সময়ের অনেক ত্রুটি বিচ্যুতি যে আমরা স্বীকার করিনি তা নয়। এখন যে জিনিসটা আপনারা লক্ষ্য করেছেন সেটা হলো- আমরা একটা জোট গঠন করেছি একটা বৃহত্তর লক্ষ্যকে জাস্টিফাই করার জন্য। আমরা সিরিয়াসলি মনে করি, মুক্তিযুদ্ধের চেতনার ওপর বিশ্বাস করে যদি এগিয়ে যাওয়া না যায় তাহলে দেশ এগোবে না।

মুক্তির চেতনা নিয়ে যে দেশটি স্বাধীনতা লাভ করলো ১৯৭১ সালে, ৭২ সালে এসেই কেন আপনারা সেই চেতনার বিরোধিতা শুরু করলেন?

বাদল: আপনি আবারেও সেই প্রশ্নে ফিরে এসেছেন, আমি যেটার উত্তর দিতে চাই না। সেটা হলো- ৭২ থেকে ৭৫- এর পৃষ্ঠাগুলো একের পর এক উল্টালে এটার উত্তর মিলবে, কেন আমরা প্রতিবাদ করতে গিয়েছিলাম।

তাহলে আপনারা কি সেই দায়টি নেবেন? আপনাদের প্রতিবাদের কারণে যে ক্ষেত্রটি তৈরি হয়েছিলো তার পরবর্তী সময়ে ৭৫ সালে বাংলাদেশে কলঙ্কিত অধ্যায়টি তৈরি হয়েছে (বঙ্গবন্ধুর হত্যাকাণ্ড)।

বাদল: সেটা, ক্ষেত্র প্রস্তুতের কথা যদি বলেন, আমি তো নিজের মুখে স্বীকৃতি দিচ্ছি, আমরা বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক পতন চেয়েছি এবং খুব তারস্বরে বলছি, যে মর্মান্তিক ঘটনা ঘটেছে তার সঙ্গে জাতীয় সামাজতান্ত্রিক দলের কোনও দেনা পাওনা নাই।

তাহলে জাসদের হাতে যে হত্যাকাণ্ডগুলো ঘটেছে তার তো কোনও বিচার হয়নি বাংলাদেশে।

বাদল: আমি বলেছি, হত্যাকাণ্ড হয়েছে, আমার বাংলাটা পরিষ্কার করে শুনেছেন কিনা জানি না। আমরা মরেছি, আমরা মেরেছি। সব ব্যাপারেই যদি পুনর্বার ওপেন করতে চান…। যদি কখনও সেটা ইতিহাসে ওপেন করেন, নো প্রোবলেম। সেটা ওপেন হতেই পারে, সব বিষয়ে আলোচনা হতে পারে।

সেই সময়ে কর্নেল তাহেরের নেতৃত্বে খালেদ মোশারফ সরকারের পতন এবং জিয়াউর রহমানের প্রতিবিপ্লবের ঘটনা নিয়ে আপনার অনুশোচনা রয়েছে কি না?

বাদল: একটি কথা বলি, কর্নেল তাহেরকে দিয়ে বা জাসদ কর্নেল তাহেরের নেতৃত্বে যে পিরিয়ডটিতে আমরা আমাদের বিপ্লব বিবেচনা করেছিলাম, তখন প্রতিদিন সেনাবাহিনীতে নানা রকম বিক্ষোভ বিদ্রোহ হচ্ছিল। সেনাবাহিনী, ইট ইজ এ স্টেইট উইথইন দ্য স্টেইট। সেই স্টেইটটাই ভেঙে যাচ্ছে, না না রকম গ্রুপিং হচ্ছে। সুতরাং আমাদের বিবেচনাবোধ ছিলো, এই প্রক্রিয়ায় আমাদের দেশের অস্তিত্বের ওপর আঘাত আসবে। সেই বিবেচনাবোধ থেকেই আমরা রুখে দাঁড়িয়েছি। সেই রুখে দাঁড়ানো, সেই আমাদের এটেমডটা কি ইনফ্রেন্টাল ডিসঅর্ডার? আমাদের এডেমডটা কি অতি বিপ্লবীপণা? ইতিহাস বিবেচনা করবে, আমরা কি প্রস্তুতিহীন অবস্থায় আক্রমনে চলে গেছি? এই জায়গাগুলো ইতিহাস খোল নলচে দেখার চেষ্টা করছে। নানা জন বই লিখছেন, নানা জন মন্তব্য করছেন।

যেহেতু আপনি স্বীকার করেছেন, আপনারা বঙ্গবন্ধু সরকারের পতন চেয়েছিলেন, আর বঙ্গবন্ধু সরকারের পতনের পর পরবর্তী সময়ে জিয়াউর রহমানের সরকারকে নিয়ে আসার পরিকল্পনা কি আপনাদের শুরু থেকেই ছিলো?

বাদল: জিয়াউর রহমানকে নিয়ে আসার পরিকল্পনা কখনওই ছিলো না, জিয়াউর রহমানের ব্যক্তিগত পরিচয় ছিলো কর্নেল তাহেরের সঙ্গে, সাংগঠনিক প্রক্রিয়ায় আমরা কখনেও অ্যাসোসিয়েট ছিলাম না।

তাহলে কর্নেল তাহের যেহেতু জাসদের কমান্ডার ছিলেন, তাহলে তিনি কি এই দায় এড়াতে পারেন?

বাদল: আমি বলছি, সম্পর্ক ছিলো তাদের (কর্নেল তাহের-জিয়াউর রহমান) এবং বিবেচনায় এসেছে, ওই যে সেনাবাহিনীতে নানা রকম বিক্ষোভ, সেনাবাহিনীর ফেব্রিকটা ছিঁড়ে যাচ্ছে, কর্নেল তাহের মনে করেছেন জিয়াউর রহমান এই ফেব্রিকটা, ফেব্রিক অব আর্মি, রক্ষা করার ক্ষেত্রে ভূমিকা নিতে পারবেন। কিন্তু বিপ্লবের ইতিহাস বলে, রং পার্সন চুজ করলে, খুব মর্মান্তিক পরিণতি হয়, সেই মর্মান্তিক পরিনতি তো জাসদের নিতেই হয়েছে।

বর্তমান জোটের যে তথ্যমন্ত্রী রয়েছেন, হাসানুল হক ইনুকে নিয়ে আপনাদের নানা প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হয়, এই বিষয়টি পরিষ্কার করবেন?

বাদল: আমি একটা কথা বলি, এই হাসানুল হক ইনুর ভূমিকা নিয়ে যে প্রশ্ন আসছে, আদতে যদি তার ভূমিকা নিয়ে এতো প্রশ্ন হয়, তাহলে কেন তাকে মন্ত্রী রাখা হয়েছে? আপনারা যদি আসলেই মনে করেন যে, তিনি এতো কিছুতে যুক্ত ছিলেন, তাহলে তাকে তথ্যমন্ত্রী রাখার মধ্য দিয়ে তো আপনারাই ভুল আচরণ করছেন। দ্বিতীয় কথা হলো, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল রাজনৈতিক বিরোধিতা করেছে। কিন্তু সামরিক যে কর্মকাণ্ডটি বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধে সাধিত হয়েছে, তার সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ ছিলো না। বর্তমান সরকারতো অনেক কিছু নিয়ে ইনকোয়ারি করেছে, মাহফুজ আনামকে নিয়ে ৮০টা মামলা হয়েছে। হোয়াই ডোন্ট ইউ স্টার্ট ইনকোয়ারি। ইনকোয়ারি করলেই সবকিছু বেরিয়ে আসবে। ইনকোয়েরি করে যদি ব্যক্তিকে সামনে নিয়ে আসতে পারেন, তাহলে ইনকোয়েরিতে যা হবে তাই। আমরা বলেছি, এই ঘটনার সঙ্গে আমরা কন্সিনকালেও যুক্ত ছিলাম না। আর কোনও ব্যক্তিকে যদি আপনি দোষী সাব্যস্ত করেন, সেই ব্যক্তিকে নিয়ে আপনার সরকার চলছে, আবার একদিকে দোষী সাব্যস্ত করছেন, ‘টু থিংস ক্যান নট গো টুগেদার’।

সেই সময় থেকেই বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ক্ষমতা দখলের যে প্রক্রিয়া শুরু হয়, এই প্রক্রিয়ার পেছনের কারিগর হিসেবে অনেক সময় জাসদকে দায়ী করা হয়। জাসদ সেনাবাহিনীকে ক্ষমতায় বসার একটি পথ তৈরী করেছিলো বলেই ধারাবাহিকভাবে বাংলাদেশের গণতন্ত্র সেনাবাহিনীর সদস্যদের দ্বারা আক্রান্ত হয়েছে, এই যুক্তিকে আপনি কিভাবে বিশ্লেষণ করবেন?

বাদল: আমরা সেনাবাহিনীর যাদের নিয়ে কাজ করতাম, তারা কখনেও ক্ষমতায় টমতায় আসে নাই। জাসদের যদি আদৌ সেনাবাহিনী নিয়ে কোনও কাজ কারবার থাকে, সেগুলো সৈনিক, হাবিলদার, সুবেদার, পর্যন্ত। সুতরাং ওইটা আমাদেরকে দোষারোপ করে লাভ নাই। যেই একের পর এক চক্রান্ত দেখেছেন, এই চক্রান্তকারীদের সঙ্গে জাসদের সম্পর্ক ছিলো না। আপনার মাধ্যমে এটা সবাইকে মনে করাতে চাই। আমরা যে সংস্থা গড়ে তুলেছিলাম, যেটার জন্য আমাদের অভিযুক্ত করা হয়, সেটা হলো বিপ্লবী সৈনিক সংস্থা।

গণবাহিনী ও রক্ষীবাহিনীর কনফ্লিকটা একটু ব্যাখ্যা করবেন?

বাদল: সেটা হলো যখন, জাসদ যখন মনে করেছে গণতান্ত্রিকভাবে আর এগোনো যাচ্ছে না, তখন ডিক্লারেশন দিয়ে উই হ্যাভ টেইক আপ আর্মস, বাই ফর্মিং গণবাহিনী। সো ন্যাচারালি, গণবাহিনী আর্মস নিয়ে এটা রুখে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিলো।

একটি সরকার রয়েছে, নতুন একটি দেশ স্বাধীন হয়েছে, (১৯৭২ সালে) আপনাদের কেন হঠাৎ করে মনে হলো গণবাহিনী তৈরি করে সেই সরকারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে?

বাদল: আমাদের কেন মনে হলো সেই জায়গাটাই তো আপনাকে বলছিলাম, গবেষণা করুন ইতিহাসের খাতায় খোঁজ নেন। আমাদেরও ২০ হাজার কর্মী বাংলাদেশের প্রত্যেক জায়গায় রক্ত দিয়েছে। বাংলাদেশের মাটি চাপ দিলে, আমাদেরও রক্ত বেরিয়ে আসবে।

এই জায়গাটিতে (জাসদের ২০ হাজার কর্মী হত্যার) কেন আপনারা তদন্তের জন্য বলছেন না?

বাদল: এখনই তো বললাম, আপনার সামনেই তো বললাম তদন্ত হোক, আমি যে জোটে রয়েছি আমি সেই সরকারকে বলেছি। আমি জাতীয় সংসদে বলেছি, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বসা ছিলেন। তদন্ত হোক, সো বি ইট, লেট ইট বি ক্লিয়ার টু এভরি বডি, হু ইজ হোয়াট, অ্যান্ড হু ইজ হু। তদন্ত করেন না, আমি ওইভাবে তো সরকারে নাই, আমি সরকার পক্ষের লোক। সরকার তদন্ত কালকেই শুরু করতে পারে। অসুবিধা কী?

প্রশ্ন: তাহলে আপনি কি বলতে চাইছেন, সেই সময়ে আওয়ামী লীগের মুজিব বাহিনী কর্তৃক জাসদের ২০ হাজার কর্মী নিহত হয়েছেন?

বাদল: না, মুজিব বাহিনীর সদস্য, মুজিব বাহিনী কর্তৃক না, আমি বলেছি, ৭২-৭৫ সময়ে জাসদেরও ২০ হাজার কর্মী মারা গেছে। সেটা বজ্রাঘাতে মারা গেছে না পুকুরে পড়ে মারা গেছে তদন্ত করলেই বেরুবে।

[উৎসঃ বাংলা ট্রিবিউন, ‘মুজিবের রক্তাক্ত বিরোধিতা করেছি, পতন চেয়েছি’, জুন ১৪, ২০১৬]

আরো কিছু প্রাসঙ্গিক লিংকঃ

জাসদের উত্থান, বেহাত বিপ্লব ও পতনের ইতিহাস

শেখ মুজিবকে হত্যা করেছে জাসদ, ইনু হল ভন্ড ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী- সৈয়দ আশরাফ

১৩ জুন ২০১৬ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিতে দুই দিনব্যাপী ছাত্রলীগের বর্ধিত সভা ও কর্মশালার সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও জনপ্রশাসনমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম বলেন,

জাসদ ও বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্রের ধারক বাহকেরা শতভাগ ভণ্ড। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর ছাত্রলীগের একটা অংশ হঠকারী সিদ্ধান্ত নিয়ে বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্র নিয়ে আসে। এর ধারক বাহকেরা দেশটাকে ছিন্ন-ভিন্ন করে দেয়। বঙ্গবন্ধু দেশে ফেরার আগেই তারা দেশকে ছিন্ন-ভিন্ন করার চেষ্টা করেছিল। তারা যদি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার সব পরিবেশ সৃষ্টি না করতো, তাহলে আজ বাংলাদেশ ভিন্ন বাংলাদেশ হতে পারতো। বঙ্গবন্ধু জীবিত থাকলে দেশ আগেই অর্থনৈতিক অগ্রসরতা অর্জন করত। শুধু হঠকারীদের কারণে তা সম্ভব হয়নি। তারা অতি বিপ্লবী ছিল। তারা অনেক প্রতিক্রিয়াশীল ছিল। কিন্তু এক সময় হারিয়ে গেল। এখন আওয়ামী লীগের লেজুড়বৃত্তি করে।বর্তমানে সরকারের মন্ত্রী সভার সদস্য জাসদের সভাপতি হাসানুল হক ইনুর প্রতি ইঙ্গিত করে আশরাফ বলেন, এদের একজনকে আবার মন্ত্রিত্বও দেওয়া হয়েছে, যার প্রায়শ্চিত্ত আওয়ামী লীগকে আজীবন করতে হবে। (পাভেল হায়দার চৌধুরী, জাসদকে নিয়ে আশরাফের মন্তব্য প্রসঙ্গে কেন্দ্রীয় নেতাদের যা বললেন প্রধানমন্ত্রী, বাংলা ট্রিবিউন, জুন ১৪ ২০১৬)

বঙ্গবন্ধু হত্যার জন্য আওয়ামী লীগই দায়ী: আ স ম রব

বঙ্গবন্ধু হত্যার জন্য আওয়ামী লীগকেই দায়ী করে বিবৃতি দিয়েছেন জাসদের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক আ স ম আবদুর রব।তিনি বলেন,

‘আওয়ামী লীগের দলীয় ভুল রাজনীতি বঙ্গবন্ধুকে দলীয় আবর্তে বন্দী করে। ঔপনিবেশিক শাসনের বেড়াজালে আবদ্ধ করে জনগণের কাছ থেকে তাকে ক্রমাগত বিচ্ছিন্ন করে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর আওয়ামী লীগই সরকার গঠন করে। ৩২ নম্বর ধানমণ্ডিতে বঙ্গবন্ধুর লাশ রেখে আওয়ামী লীগ নেতারাই মন্ত্রী হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন। আওয়ামী লীগ নেতাদের নির্দেশেই জাতীয় চার নেতাকে হত্যা করা হয় এবং সেই সরকারই দেশে প্রথম সামরিক শাসন জারি করে। এসব সত্য এবং ভুল রাজনীতি আওয়ামী লীগের স্বীকার না করাই হবে অতিমাত্রায় ভণ্ডামী।’(বঙ্গবন্ধু হত্যার জন্য আওয়ামী লীগই দায়ী: আ স ম রব, বাংলা ট্রিবিউন, ১৪ জুন ২০১৬)

গণবাহিনী আ.লীগের নেতা-কর্মীদের হত্যা না করলে দেশে দুর্দিন আসতো না: ফিরোজ রশীদ

জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ফিরোজ রশীদ জাসদ সভাপতি ও তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনুর প্রতি ইঙ্গিত করে ১৪ জুন ২০১৬ তারিখ সংসদে বলেন,

‘আমরা ছাত্রলীগ করতাম। একসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ করেছি। এক বিছানা থেকে উঠে এসে উনি আমাদের উদ্দেশে অস্ত্র ধরেছেন। গুনে গুনে আমাদের ২০ লাখ লোককে হত্যা করল। সেদিন যদি গণবাহিনী গঠন করে বেছে বেছে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের এভাবে হত্যা না করত, তাহলে দেশে দুর্দিন হতো না। বঙ্গবন্ধুর মতো এতবড় জাতীয় নেতাকে আমরা হারাতাম না। সেজন্য জাতি আজ পর্যন্ত ভুগছে।’ (আমাদের সময় ১৫ জুন ; জনকণ্ঠ ১৪ জুন; বাংলা ট্রিবিউন ১৪ জুন ২০১৬ )

বঙ্গবন্ধু হত্যায় আবারো জাসদকে দায়ী করলেন শেখ সেলিম

শেখ মুজিব হত্যাকাণ্ডে জড়িত শেখ সেলিম – কে এম শফিউল্লাহ
<iframe width="420" height="315" src="https://www.youtube.com/embed/EaanB8BlaPc" frameborder="0" allowfullscreen></iframe>

আরো পড়ুনঃ জাসদের উত্থান, বেহাত বিপ্লব ও পতনের ইতিহাস
http://www.muldharabd.com/?p=1193
 
Reflection of 1975 Army Coup
ফিরে দেখা ৭৫ এর সেনা অভ্যুত্থান'

resize.php

Sun, August 2017

মেজর জেনারেল আ ল ম ফজলুর রহমান (অব.):

ණ☛ কেন দেখতে চাই তার কারণ আছে। বলবো আমার মতো করে। যে ভাবে আমি একজন ক্যাপ্টেন হিসাবে দেখেছি সেই সময়ের সেনা অভ্যুত্থানকে। চাকরিতে জুনিয়র অফিসার ছিলাম ঠিকই তবে আমরাই যেমন স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশ নিয়ে যুদ্ধ দেখেছি, যুদ্ধ করেছি। তেমনি জুনিয়র হয়েও সব কাজ আনজাম দিয়েছি সদ্য স্বাধীন দেশের দেশ ও সেনাবাহিনী পুনর্গঠনে। তাই বর্তমানের একজন ক্যাপ্টেন এবং আমাদের মাঝে তফাৎ ছিল এবং আছে। কারণ আমরা প্রথমে যুদ্ধ করেছি তার পরে সেনাবাহিনীর অফিসার হয়েছি যা সামরিক ইতিহাসের বিরল ঘটনার মধ্যে একটি। প্রথমেই ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি কারণ আলোচনায় অনেক স্পর্শকাতর বিষয় আসবে যা নিয়ে আলোচনা করতেই হবে। আলোচনার সময় আমি বস্তুনিষ্ঠ থেকে নির্মোহ দৃষ্টাকোনে সব বিষয় তুলে আনার চেষ্টা করবো। এতে যার যে স্থান আমি তাঁকে তাই দেবো। অতিরঞ্জনে যাবোনা বা পক্ষপাতিত্ব করে নিজের বা সতীর্থের ঢোল বাজাবোনা। যা আমি নিজে দেখেছি বুঝেছি সত্য বলে জেনেছি তাই বলবো। অতএব আমার আলোচনা কারো মনোক্ষুন্যের কারণ হলে নিজ গুণে ক্ষমা করে দেবেন। এই ভেবে ভূল ভ্রান্তি লোভ লালসায় পড়ে যে যা করেছে তার জন্য আমরা কেউ দায়ী নই। যে আদা খেয়েছে সে ঝাল বুঝবে। আমরা ক্ষমা করলে বা না করলে ইতিহাস বসে থাকবেনা। যার যা পাওনা জীবিত কিংবা মৃত ইতিহাস তাকে তা-ই দেবে আমি চাই বা না চাই পছন্দ করি না করি।

ණ☛ একটা কথা আমি অকপটে স্বীকার করি আমার দেখা অন্যের দেখার মতো নাও হতে পারে। আমি এও মনেকরি আমার ইউনিটে যা যা ঘটেছিল ৭৫ এ সেনা বিদ্রোহ ও জাসদ নিয়ন্ত্রিত বিপ্লবী সৈনিক সংস্থার দ্বারা তা অন্য সব ইউনিটে একই ভাবে ঘটে থাকবে এটা প্রতিষ্ঠিত সত্য। কারণ বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সবটাই তখন কম বেশি একই ফোবিয়ায় আক্রান্ত হয়ে পড়েছিল। কাজেই কেউ যদি ৭৫ সালের অনেক পরে নিজে বই লিখে নিজের এবং সতীর্থের ঢোল বাজান বা একটি গোষ্ঠীর উপরে সব দোষ চাপিয়ে তাদের হেয় প্রতিপন্ন করার অপচেষ্টা করেন তাহলে সে বিষয়ের নিরসন কল্পে সত্য ইতিহাস তুলে ধরা সবার দায়িত্বের মতো আমারও দায়িত্ব বলে মনেকরি। এই তাড়না থেকেই আমার এই ক্ষুদ্র প্রয়াস। যদিও আমার কাছে এবিষয়ে আমার সামরিক চাকরির দীর্ঘ অভিজ্ঞতা ও ধারনা ছাড়া অন্য কোনও দালিলিক প্রমান নাই।

ණ☛ ৭৫ এর সেনা বিদ্রোহ যখন সংঘটিত হয় তখন আমি পাবনার পাকশিস্হ রুপপুর ডাকবাংলোতে অবস্থান করে উওর বঙ্গের দুর্ভিক্ষাবস্তার অবসান কল্পে ফুড মুভমেন্টের কাজে নিয়োজিত ছিলাম। সকালে যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা সিপাহী জহির তার রেডিও নিয়ে দৌড়াতে দৌড়াতে আমার কাছে এসে ঢাকায় সেনা বিদ্রোহে বংগবন্ধুর স্বপরিবারে নিহত হওয়ার খবর দেয়। রেডিওতে মেজর ডালিমের স্বকন্ঠে ঘোষনা শুনে নিশ্চিত হই। পরে যা ঘটেছিল তার উপরে আমার একটি লেখা ইতিমধ্যে ফেসবুকে লিখেছি আপনাদের অনেকে তা পড়ে থাকবেন। তার পরে আমি দীর্ঘ সময় সেনাবাহিনীতে চাকুরীর সুবাদে ৭৫ এর সেনা অভ্যুত্থানের বিষয়ে যা দেখেছি শুনেছি তার হিসাব মেলাবার চেষ্টা করেছি। কতক মিলেছে কতক মিলেনি। তারই মাঝে সেনাবাহিনীতে অবলোকন করেছি মৌলিক দুটি পরিবর্তনঃ

১। স্বাধীনতার পর থেকে বাংলাদেশের শাসন ভার ছিল বংগবন্ধুর উপরে এবং সেনাবাহিনীর কমান্ড ছিল মুক্তিযোদ্ধা অফিসারদের হাতে।

২। প্রথমে বংগবন্ধু সেনা বিদ্রোহে নিহত হলেন। জেনারেল জিয়া উর রহমান সেনাবাহিনী প্রধানের দায়িত্ব নিলেন। জেনারেল জিয়া সেনাবাহিনী প্রধান হলে রিপেটরিয়েট অফিসার কর্ণেল এরশাদ দিল্লিতে তার এনডিসি কোর্স অসমাপ্ত রেখে জেনারেল জিয়ার ডাকে দেশে ফিরে একই বছরে দুটি প্রোমোশন পেয়ে সেনাবাহিনী প্রধান হলেন। আমারা শুনে আসছি এবং এখনও শুনি জেনারেল শওকত ও জেনারেল মঞ্জুরের মধ্যে রেশারেশির কারণে জেনারেল জিয়া জেনারেল এরশাদের মতো একজন বশংবদকে বাধ্য হয়ে সেনাবাহিনী প্রধান করেন।

ණ☛ কিন্তু এটা ভুললেতো চলবেনা জেনারেল এরশাদের জন্ম ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কোচবিহার জেলায় যেখানে এখনো তাঁর জ্ঞ্যাতিগোষ্ঠি এবং আত্মীয় স্বজন আছেন। বংগবন্ধু সেনা বিদ্রোহে নিহত হবার পরে জেনারেল এরশাদ তড়িঘড়ি করে ভারতের দিল্লিতে তাঁর এনডিসি কোর্স অসমাপ্ত রেখে দেশে ফিরে ডাবল প্রোমোশন পেয়ে সেনাবাহিনী প্রধান হলেন এটা কি শুধু শওকত ও মঞ্জুরের রেশারেশির কারণে! এতো সরলিকরন বোধকরি ঠিক নয়।

ණ☛ এর পরে চট্টগ্রামে সেনা অফিসার বিদ্রোহে নিহত হলেন প্রেসিডেন্ট জেনারেল জিয়া উর রহমান। নিহত হলেন জেনারেল মঞ্জুর। ১৩ জন খেতাব প্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা অফিসারকে ফাঁসিতে ঝোলানো হলো। ১০০ জনের মতো মুক্তিযোদ্ধা অফিসারকে চাকুরীচ্যুত করা হলো। মজার বিষয় হলো জেনারেল মঞ্জুরের অনেক গুরুত্বপূর্ণ স্টাফ অফিসার ছিলেন অনেক রিপেটরিয়েট অফিসার তাদের প্রেসিডেন্ট জিয়া হত্যার সম্পৃক্ততা প্রমাণিত হবার পরেও এদের কাউকে কোনো প্রকার শাস্তি দেওয়া হয়নাই।

ණ☛ এতে সন্দেহাতীত ভাবে প্রমাণিত হয় পাকিস্তান ফেরৎ কিছু সিনিয়র সামরিক অফিসার বংগবন্ধু এবং মুক্তিযোদ্ধা অফিসারদের উৎখাত ও নির্মল করে দেশের শাসন ভার এবং সামরিক বাহিনীর কমান্ড ছলে বলে কৌশলে করায়ত্ব করার মিশন নিয়ে সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশে প্রত্যাবর্তন করেছিলেন।

ණ☛ বংগবন্ধু এবং জেনারেল জিয়া হত্যার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের শাসন ভার এবং বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর কমান্ড রিপেটরিয়েট অফিসারদের হাতে চলে যায়। যার মাধ্যমে এই অসম্ভব সম্ভব হলো তিনি হলেন ভারতে জন্ম গ্রহনকারী এবং দিল্লিতে এনডিসি কোর্স অসমাপ্ত রেখে দেশে ফেরা ১বছরে জেনারেল জিয়া কতৃক ডাবল পদোন্নতি পাওয়া রিপেটরিয়েট অফিসার সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল হোসেইন মোহাম্মদ এরশাদ।

দেশ স্বাধীনের ৫ বছরের মধ্যে ভোজবাজির মতো সব উলটপালট হয়ে গেলো। এখন কেউ যদি বলেন ঘটনা পরম্পরায় এসব সংঘটিত হয়েছিলো। এখানে কোনো ষঢ়যন্ত্র ছিলো না। তাহলে ঘটনার পৃষ্ঠে যে কথাগুলো ভেষে ওঠে তাহলোঃ

১। সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতির চার পাশে মুক্তিযোদ্ধা অফিসারদের সমাবেশ ঘটার কথা ছিলো। কিন্তু আমরা দেখলাম বংগবন্ধুর সামরিক সচিব এবং এডিসি সবাই রিপেটরিয়েট অফিসার। কেন? কার পরামর্শে এই সব রিপেটরিয়েট পাকিস্তান ফেরৎ অফিসারদের বংগবন্ধুর চারপাশে নিয়োজিত করা হয়েছিল? এটা কি বংগবন্ধুকে মুক্তিযোদ্ধা অফিসারদের বিরুদ্ধে ধীরে ধীরে তাঁর কান ভারি করে ক্ষেপিয়ে তোলার ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে পরিকল্পিত ভাবে করা হয়েছিল? এর প্রমাণ আমরা পাই যখন মেজর শরিফুল হক ডালিম এবং তাঁর স্ত্রী নিম্মি গাজি গোলাম মোস্তফার দ্বারা অপহৃত হয়ে ৩২ নম্বরে বংগবন্ধুর সামনে নীত হলে মেজর ডালিম নিজে এবং তাঁর স্ত্রীর নিগৃহিত হবার ঘটনা বংগবন্ধুর সকাশে ব্যাক্ত করেন। বংগবন্ধু যথাবিহিত বিচারের আশ্বাস দেন। কিন্তু ফলাফল দাঁড়ালো বংগবন্ধু বিচারের পরিবর্তে মেজর ডালিমকে চাকরিচ্যুত করলেন। এতে কি প্রমাণিত হয়না কে বা কারা আড়ালে থেকে দেশী বিদেশী একটি সুগভীর ষঢ়যন্ত্রের অংশ হিসেবে একদিকে বংগবন্ধুকে মুক্তিযোদ্ধা অফিসারদের রিরুদ্ধে যেমন ক্ষেপিয়ে তোলা হচ্ছিল অন্যদিকে তেমনি মুক্তিযোদ্ধা অফিসারদেরকেও বংগবন্ধুর বিরুদ্ধে বিতশ্রদ্ধ করে তোলার কাজ খুব সন্তপর্ণে এগিয়ে চলছিল।

২। কেন সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশের ফোর্সেস ইন্টেলিজেন্স ডিজিএফআই প্রধান ছিলেন ব্রিগেডিয়ার রউফ একজন রিপেটরিয়েট অফিসার? দেশের গোয়েন্দা তথ্য ভান্ডার কেন রিপেটরিয়েট অফিসারদের হাতে ছেড়ে দেওয়া হয়েছিল? কার পরামর্শে এটা সম্ভব হয়েছিল? সম্ভবতঃ ডিজিএফআই প্রধান ব্রিগেডিয়ার রউফ ৩২নম্বরে বংগবন্ধুর বাড়িতে সেনা হামলার খবর ১৫ই আগষ্ট তারিখে রাত ২টা হতে ২.৩০ মিনিটের দিকে জানতে পারেন। যতদুর জানা যায় ব্রিগেডিয়ার রউফ এই মহা রাষ্ট্রীয় দুর্যোগের খবর কাউকে না জানিয়ে চেপে যান। যদি তিনি এই সংবাদ সেনাবাহিনী প্রধানকে তৎখনাত অবহিত করতেন তাহলে বংগবন্ধু এবং তাঁর পরিবারের সদস্যদের জীবন রক্ষা করা যেতো। কিন্তু আমরা লক্ষ্য করলাম সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল শফিউল্যাহ বংগবন্ধু আক্রান্ত হয়েছেন এই সংবাদ পেলেন ভার ৪.৩০ মিনিট হতে ৫.৩০ মিনিটের দিকে যখন তার করার তেমন কিছুই ছিলনা। অর্থাৎ সেনাবাহিনী প্রধানকে বিতর্কিত করা হলো একটা সুন্দর পুর্ব পরিকল্পিত ষঢ়যন্ত্রের মাধ্যমে। ব্যর্থতার সব দোষ মাথায় নিয়ে সেনাবাহিনী প্রধান বিতর্কিত হলেন আর পিছনের ষঢ়যন্ত্রের মুল কুশীলবরা আড়ালেই থেকে গেলেন।

৩। সামরিক গোয়েন্দা প্রধানের ভারও ছিল সম্ভবতঃ একজন রিপেটরিয়েট অফিসার কর্ণেল সালাহ উদ্দীনের হাতে। সেনানিবাস থেকে ট্যাংক বহর গভীর রাতে শহরের দিকে যাচ্ছে এই সংবাদ ডিরেক্টর মিলিটারী ইন্টেলিজেন্স (ডিএমআই ), ডিজিএফআই, ডাইরেক্টর মিলিটারী অপারেশন্স (ডিএমও), ডাইরেক্টর মিলিটারী ট্রেইনিং (ডিএমটি) জানবেননা এটা কি বিশ্বাসযোগ্য? ঐসময় ট্যাংক মুভমেন্টের বিষয়টি অতীব স্পর্শকাতর হিসাবে বিবেচিত হতো। কোথাও ট্যাংক মুভ করাতে হলে উপরে বর্ণিত গুরুত্বপূর্ণ সব অফিসারদের তা অবহিত করার এবং সম্ভবতঃ ক্ষেত্র বিশেষে লিখিত আদেশ নেওয়ার নিয়ম ছিল এমন ধারনা আমি পোষন করি। কিন্তু কেউ কিছু জানলেননা ঢাকা সেনানিবাস থেকে ট্যাংক বহর কিভাবে ঢাকা শহরে গেলো? এটা বিশ্বাস করা যায়না। বিশ্বাস যোগ্য নয়।

ණ☛ ৭৫ সালে সম্ভবতঃ বংগবন্ধুর নির্দেশ ছিল ঢাকা থেকে ট্যাংক গুলোকে ইউনিটসহ বগুড়া সেনানিবাসে স্থানান্তরিত করার। কিন্তু তা করা হয় নাই। কেন ট্যাংক গুলোকে বগুড়ায় স্থানান্তরিত করা হয় নাই এই প্রশ্ন আমরা ৭৫সালে লেঃ কর্ণেল মোমেনকে করেছিলাম যশোর সেনানীবাসে অবস্থিত কম্বাইন্ড আর্মি স্কুলে (COMBAS) যখন তিনি সেখানে আসেন অতিথি বক্তা হিসাবে আমাদের অফিসার্স ওয়েপন কোর্সকে (OW) এ্যাডরেস করার জন্য।

ණ☛ কর্ণেল মোমেন বংগবন্ধু যখন নিহত হন তখন ঢাকা সেনানিবাসসহ ফার্স্ট ল্যান্সার ব্যটালিয়নের (ট্যাংক রেজিমেন্টের) কমান্ডিং অফিসার ছিলেন। এই ফার্স্ট ল্যান্সার ব্যটালিয়নের সবাই ট্যাংকসহ ৩২নম্বরে আক্রমন চালায় মেজর ফারুকের নেতৃত্বে। ঐসময় কর্ণেল মোমেন ছুটিতে ছিলেন। প্রশ্ন নিশ্চয়ই হয় যখন বংগবন্ধু নিহত হলেন তখন কর্ণেল মোমেন ছুটিতে কেন? যেমন জেনারেল জিয়ার সাথে সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল এরশাদের চট্টগ্রামে যাওয়ার কথা ছিল কিন্তু কোনো এক অব্যক্ত কারণে জেনারেল এরশাদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের সাথে চট্টগ্রামে গেলেননা। ঠিক ঐসময়ে চট্টগ্রামে জেনারেল জিয়া নিহত হলেন। এটা কি কাকতালীয় ঘটনা হতে পারে? তার পরের ঘটনাতো তা বলেনা । যাইহোক কম্বাসে আমাদের প্রশ্নের উওর দিতে ব্যার্থ হয়ে কর্ণেল মোমেন তিক্তবিরক্ত হয়ে কেন ট্যাংকগুলোকে বগুড়াতে নেওয়া হয়নাই এর উওরে ইংরেজিতে যা বলেছিলেন " If aunte had balls". তাঁর এই উওর আমার জীবনের শেষদিন পর্যন্ত মনে থাকবে।

৪। ১৫ই আগষ্টে বিডিআর প্রধান ছিলেন জেনারেল খলিল যিনি নিজে একজন রিপেটরিয়েট অফিসার ছিলেন। তিনি পিলখানার সব দরজা বন্ধ করে বসেছিলেন। বংগবন্ধুকে রক্ষা করতে স্বসৈন্যে এগিয়ে আসেননি। এদিকে রক্ষীবাহিনীর প্রধান এ এন এম নূরুজ্জামানকেও আমরা দেখি বংগবন্ধুর নিহত হবার সময় তিনি বিদেশে সরকারী কাজে অবস্থান করছেন। জেনারেল মঈনুল হোসেন চৌধুরী তাঁর লেখা এক জেনারেলের ''নীরব সাক্ষ্য'' বই এ উদ্ধৃত করেছেন। তিনি যখন থাইল্যান্ডে রাষ্ট্রদূতের দায়িত্ব পালন করছিলেন তখন একটি প্রতিবেশী দেশের কুটনীতিকরা এ এন এম নূরুজ্জামানের খোঁজ খবর জানতে চেয়ে তাঁকে প্রায়শ বিব্রত করতেন।

ණ☛ এইসব কেন'র উওর খুঁজলে যা প্রতিভাত হয় তাহলো একটা দেশী বিদেশী ষড়যন্ত্র সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশে রিপেটরিয়েশনের শুরু থেকে জট পাকাতে থাকে যার শেষ, পরিনতির বলি হন বংগবন্ধু নিজে, জেনারেল জিয়া, জেনারেল মঞ্জুর, ১৩জন খেতাব প্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা অফিসার। চাকুরীচ্যুত করা হয় শত শত মুক্তিযোদ্ধা অফিসারকে। অবশেষে দেশের শাসন ভার ও সেনাবাহিনীর কমান্ড করায়ত্ব করেন অমুক্তিযোদ্ধা ভারতে জন্ম গ্রহনকারী পাকিস্তান ফেরৎ জেনারেল এরশাদ। জেনারেল শওকত ও জেনারেল মঞ্জুরের মধ্যেকার রেশারেশী সৃষ্টির পিছনেও সম্ভবতঃ ষড়যন্ত্র ছিলো। উদ্দেশ্য জেনারেল জিয়াকে দুর্বল করে তাঁর হত্যার ক্ষেত্র প্রস্তুত করা। যেমন বংগবন্ধুর ক্ষেত্রেও হয়েছিল। প্রথমে তাঁকে মুক্তিযোদ্ধা অফিসারদের মুখোমুখি দাঁড় করানো হয়। একই সঙ্গে বংগবন্ধুর বিরুদ্ধে অতিব নিষ্ঠুর ভাবে চালানো হয় অপপ্রচার। ধীরে ধীরে বংগবন্ধুকে হত্যার দিকে ঠেলে দেওয়া হয়। এই অতীব চাতুর্যপূর্ণ ষড়যন্ত্রের শিকারের পরিনত হয়ে একদল মুক্তিযোদ্ধা অফিসারদের আমরা বংগবন্ধু এবং জেনারেল জিয়াকে হত্যা করতে দেখি। এর মানে এই নয় যে আমি খুনি মুক্তিযোদ্ধা অফিসারদের পক্ষে সহানুভূতি প্রকাশ করছি। তারা দেশ ও জাতির কলঙ্ক। চরম শাস্তিই তাদের প্রাপ্য।

ණ☛ এটা ঠিক হাতির দাঁতের মতো। হাতির মুখের সামনে বেরিয়ে থাকা যে দাঁত দুটা কে আমরা দেখি তা দিয়ে হাতি ভারি বস্তু উৎখাত ও অপসারণের জন্য ব্যাবহার করে। ষড়যন্ত্রকারীরা মুক্তিযোদ্ধা অফিসারদের হাতির বেরিয়ে থাকা দাঁতের মতো বংগবন্ধু ও জেনারেল জিয়াকে উৎখাতের কাজে ব্যবহার করে নিজেরা হাতির চোয়ালের দাঁতের মতো আড়ালে থেকে গেছে। এবারে দেখতে চেষ্টা করবো বংগবন্ধু এবং জেনারেল জিয়াকে কি ষঢ়যন্ত্রের দ্বারা প্রভাবিত করা সম্ভব ছিল?

১। বংগবন্ধু বাংলাদেশের স্থপতি অবিসংবাদিত নেতা। হিমালয় সামান তাঁর ব্যক্তিত্ব। একই সাথে তিনি ছিলেন জনদরদী এবং কোমল হৃদয়ের মানুষ। তিনি মানুষকে ভালোবাসতেন বিশ্বাস করতেন মনের কথা খুলে বলতেন আপন মনে করে। শত্রু মিত্র নির্বিশেষে তিনি সবাইকে আপন করে বুকে জড়িয়ে ধরতেন। তাঁর এই সরলতার পূর্ণ সুযোগ দেশী বিদেশী স্বার্থান্বেষী মহল অশুভ উদ্দেশ্যে ব্যবহার করতে কার্পণ্য করেনাই। আমি বলবো তিনি সরল বিশ্বাস আর মানুষকে ভালোবাসার বলি হয়েছেন। আমি এখনও মনেকরি তিনি যদি বংগভবনে থাকতেন তাহলে হয়তো এতো সহজে তাঁকে পরিবারসহ নিহত করা সম্ভব ছিল না।

২। পাকিস্তান সেনাবাহিনীর গোয়েন্দা বিভাগের একজন চৌকষ অফিসার ছিলেন জেনারেল জিয়া। চলনে বলনে বংগবন্ধুর সম্পূর্ণ উল্টা। তাঁকে কেন ষড়যন্ত্রের কাছে বলি হতে হলো? তিনিতো ষড়যন্ত্র উৎখাতের কাজই করতেন সামরিক গোয়েন্দা বিভাগের অফিসার হিসেবে। আমার মনে হয় তিনি সেনা বিদ্রোহ দমনে এবং কর্ণেল তাহের গংদের ষঢড়যন্ত্রের চাপে তদুপরি জেনারেল শওকত এবং জেনারেল মঞ্জুর তাঁর প্রতি বৈরী থাকার ফলে ক্ষমতা সংহত করতে তিনি জেনারেল এরশাদের উপরে নির্ভরশীল হয়ে তাঁকে সেনাবাহিনী প্রধান করে দেশের মধ্যে পাকিস্তান প্রত্যাগত সামরিক অফিসার ও সৈনিকদের আস্থা আর্জনের চেষ্টা করেন।

ණ☛ এই জন্যই ব্রিগেডিয়ার ফিরোজ সালাহ উদ্দীন এর মতো মুক্তিযুদ্ধের সময়ে বাংলাদেশে অবস্থান করে পাকিস্তান আর্মির সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে মুক্তিবহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধে অংশ নেয়া ও পাকিস্তান বাহিনীর সাথে আত্মসমর্পণকারীকে জেনারেল জিয়া সামরিক সচিব করেন। পরে রিপেটরিয়েট অফিসার জেনারেল সাদেকুর রহমান চৌধুরী প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের সামরিক সচিব হন।

ණ☛ প্রেসিডেন্ট জেনারেল জিয়া অনেক অমুক্তিযোদ্ধা সামরিক বাহিনীর অফিসার যাদের অনেকে পাকিস্তানের হয়ে যুদ্ধকরে পাকিস্তানী বাহিনীর সাথে ঢাকাতে আত্মসমর্পণ করেন তাদের প্রায় সবাইকে পুলিশে চাকরি দেন। তিনি তাঁর রাজনৈতিক ক্ষমতার জন্য এটা করেছিলেন আমার ধারনা। তবে শেষ রক্ষা হয়নি। অবশেষে চট্টগ্রামে প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান সেনা অফিসার বিদ্রোহে নিহত হন।

ණ☛ একটি মিলিয়ন ডলার প্রশ্ন বংগবন্ধু এবং প্রেসিডেন্ট জেনারেল জিয়াউর রহমানের ষড়যন্ত্রের শিকারে পরিনত হয়ে এমন করুণ মৃত্যু কি অবধারিত ছিল? হয়তো ছিল হয়তো ছিল না। আমর পক্ষে এটা বলা সম্ভব নয়। তবে ষড়যন্ত্রকারীদের উদ্দেশ্যই যখন হয় ছলে বলে কৌশলে রাষ্ট্র ক্ষমতা দখল করা, সেনাবাহিনীর কমান্ড করায়ত্ব করা এবং তাতে যখন দেশী বিদেশী স্বার্থান্বেষী মহল যোগ দেয় তখন কে কত উদার মানবিক এবং অবিসংবাদিত নেতা সেটা মুখ্য বিষয় আর থাকেনা। আমরা বংগবন্ধুকে ভালোবাসি শ্রদ্ধা করি আমরা জেনারেল জিয়াকে পছন্দ করি কিন্তু শেষ রক্ষাতো করতে পারিনি। এই দায় আমাদের সবাইকে সমভাবে বহন করতে হবে।

ණ☛ পরিশেষে আমার অনুরোধ সবার প্রতি, আমার এই লেখাকে স্থুলগোষ্ঠী স্বার্থের উপরে উঠে মূল্যায়ন করার জন্য। সবার নিজস্ব মতামত আছে থাকবে। এই লেখাতে আমার দেয়া মতামত সবার পছন্দ হবে তাও না। আমি আমার মতো করে ঐতিহাসিক ঘটনার বর্ণনা দিয়েছি ভুল হলে খামতি আমার। তবে এই বর্ণনায় আমার বস্তুনিষ্ঠতা, নিরপেক্ষতা এবং আন্তরিকতার যে কোনও অভাব নাই তা নিশ্চিত করে বলতে পারি।

লেখক: কলামিস্ট ও প্রাক্তন মহাপরিচালক বিডিআর

http://newsorgan24.com/detail/27394

Qamrul Islam
“তারাই বঙ্গবন্ধুর হাড্ডি দিয়ে ডুগডুগি বাজাতে চেয়েছে...তারা তার চামড়া দিয়ে জুতা বানাতে চেয়েছে...তারা জাতির পিতাকে বলেছিল ১০ নম্বর জুতার ফিতা.....তারাই আজ রশেখ হাসিনার চারিপার্শ্বে....যিনি ৭ই নভেম্বর ট্যাংকের মধ্যে উঠে স্টেনগান নিয়ে শ্লোগান দিয়েছেন....তিনিই আজ হাসিনার বড় মন্ত্রী!...সামনে আবার কখনও ঘোরতর বিপর্যয় আসলে তারাও শেখ হাসিনাকে ছেড়ে চলে যাবে।”

 
12:00 AM, August 16, 2017 / LAST MODIFIED: 01:48 AM, August 16, 2017
Bangabandhu Killing: CJ says 'big shots' were involved
'Could not be tried for weak probe'
Staff Correspondent

Terming the killing of Bangabandhu and his family members “cowardly”, Chief Justice Surendra Kumar Sinha yesterday said many “big shots” were involved in the conspiracy to carry out the killing, but they couldn't be tried due to weakness in investigation.

“Examining the case records, we found that many big shots were involved in the conspiracy [to kill Bangabandhu]. But we couldn't put them on trial because of weakness in the probe [of the murder case]. We have clearly said in our judgement that it was a criminal conspiracy. The killing was pre-planned. We called for putting them on trial,” he said.

The chief justice was speaking at a blood donation programme, organised by the Supreme Court in association with Bangabandhu Sheikh Mujib Medical University, on the SC premises in the morning. Apex court judges, officials and staff attended it.

“Bangabandhu might have had enemies or become an adversary to someone. But his minor son Sheikh Russell, two newlywed sons and younger brother Sheikh Naser, who were not involved in politics, were also killed. What was their fault?

“Their [the killers] intention was to wipe out the name of Bangabandhu family from history. No other killing in the world bears similarity to this one. We were shocked by the way it was carried out,” the CJ said.

“It was very painful that the trial of Bangabandhu killing had been blocked by a law of the state [indemnity ordinance]. As a member of the judiciary, I feel proud because the Supreme Court cleared the way for holding the trial by scrapping the indemnity ordinance.

“There was a deep conspiracy in this case. When I was a junior judge of the Appellate Division [of the SC], I was sick. I was being treated for cancer in Singapore. At that time, there were problems with the constitution of the bench that would hear the case. I was requested to come back home soon. Even though I was not sure whether I would survive, I returned home without having treatment.

“Today is a shocking day in our history. On this day, the people of Bangladesh lost the architect of independence… the killers wanted to eliminate his belief.”

The CJ mentioned that the founding fathers of two nations in this subcontinent were assassinated -- one is Mahatma Gandhi and the other is Bangabandhu Sheikh Mujibur Rahman.

But the reasons behind the killing of the two great leaders are different. Mahatma Gandhi was killed out of extreme communalism and blind faith, noted Sinha.

Justice Md Abdul Wahhab Miah, senior-most judge of the SC, said, “Bangabandhu is the Father of the Nation. There is no question about this.

“I was a student of BA when the election was held in 1970. There was no leader other than Bangabandhu in East Pakistan and nobody could even imagine anyone else… all were under the leadership of one leader [Bangabandhu].”

He further said, “It was because of him that Bangladesh was liberated. It was because of him that I could be a judge of the apex court… We remember Bangabandhu as we are citizens of an independent country.”

After inaugurating the programme, the CJ told reporters that he wouldn't comment on criticism of the SC verdict in the 16th amendment case.

He, however, said he would talk on the issue in court.

Sabbir Faiz, additional registrar of the HC, told The Daily Star that more than 80 people, including two HC judges and some SC officials, donated blood at the programme.
http://www.thedailystar.net/frontpage/bangabandhu-killing-cj-says-big-shots-were-involved-1449211
 
বঙ্গবন্ধু ও জেল হত্যা মামলার সবকিছু প্রকাশ করব
Will reveal all news regarding Murder and Jail Killings: CJ

331266_1.jpg

প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা বলেছেন, সপরিবারে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা ও জেল হত্যা মামলার অনেক কিছুই তদন্তে উঠে আসেনি, তাই একদিন আমি লিখে সবকিছু প্রকাশ করে যাবো। বৃহস্পতিবার সুপ্রিম কোর্টের শহীদ শফিউর রহমান মিলনায়তনে 'জুডিসিয়াল ইন্টারপ্রিটেশন গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যের সময় এসব কথা বলেন।

প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা বলেন, শোকের মাস চলছে। বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলা পরিচালনা করতে গিয়ে ব্যথিত হয়েছি। বাচ্চা ছেলে রাসেলকেও (শেখ রাসেল) পর্যন্ত হত্যা করা হয়েছে। এটা পশুর থেকেও ...


তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার তদন্তে ও প্রসিকিউশনে অনেক ত্রুটি ছিলো। বিচারপতি হওয়ায় তা বলতে পারিনি। এ নিয়ে আমি ভবিষ্যতে কিছু লেখার চেষ্টা করছি। জেল হত্যা মামলা ও বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলা নিয়ে লিখবো। মামলা দুটিতে অপরাধমূলক ষড়যন্ত্র ছিলো। ক্যান্টনমেন্ট থেকে ষড়যন্ত্র করা হয়েছে।তিনি আরও বলেন, এই ষড়যন্ত্রে যারা ছিলো তারা সবাই দায়ী।
এরা ওই রাত্রে ষড়যন্ত্র করেছে, মার্চ করেছে। আমি লিখে যাবো। দেখিয়ে যাবো কারা কারা ছিলো (ষড়যন্ত্রকারী)। সেনাবাহিনীতে অনেকেই সুযোগ নিয়ে চলে গিয়েছে (দেশের ইরে)ও সবলিখে যাবো ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ার উদ্দেশ্যে প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা বলেন, আপনাদের কাছে আমার আবেদন, আমাকে মিস কোট (ভুলভাবে উদ্ধৃত বা ব্যাখ্যা) করবেন না। এতে আমাকে বিব্রত হতে হয়।

প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা আরো বলেন, আমাকে মিডিয়ায় মিস কোট করা হলে আমার পক্ষে সংবাদ সম্মেলন করা সম্ভব হয়না। আমি কোর্টে মামলা চলাকালে আইনজীবীদের অনেক কথাই বলতে পারি। কিন্তু সংবাদ মাধ্যমে বলতে পারিনা। এ বিষয়ে আপনারা খেয়াল রাখবেন।

আইনজীবীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, আপনার গরীব-অসহায় আইন প্রত্যাশীদের কাছে আইনের ন্যায্য সুবিধা পৌঁছে দেবেন।

বিচারপতিদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ছাত্র জীবনে অনেকেই অনেক ধরণের রাজনীতি করেছেন। কিন্তু বিচারপতি হবার পর আপনারা অতীত ভুলে যাবেন। সঠিক বিচারের চেষ্টা করবেন।

উক্ত অনুষ্ঠানে ড. কামাল হোসেন, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি আইনজীবী জয়নুল আবেদীন, সম্পাদক ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন সহ অসংখ্য আইনজীবীরা উপস্থিত ছিলেন।

উৎসঃ purboposhchimbd

http://www.newsofbd.net/newsdetail/detail/31/331266
 
We Are The People With Jacob Milton
18 August ·
১৫ই আগষ্ট : শেখ মুজিব এবং জিয়াউর রহমান
১৯৭২ সাল থেকে ১৪ই আগষ্ট ১৯৭৫ পর্যন্ত দেশে কোনো প্রকার গণতন্ত্রের চর্চা ছিলোনা। বাংলাদেশের স্বপ্নদ্রষ্টাদের একজন মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ের নেতা শেখ মুজিবুর রহমান সার্বিক বিবেচনা করে বিশেষ করে ভারতের আধিপত্য রোধে একনায়কতন্ত্র প্রতিষ্ঠার উদ্যেগ নিয়েছিলেন।

মহান নেতা শেখ মুজিব জানতেন যে আলোচনার দ্বারা ভারতের কাছ থেকে কোনো কিছুরই অর্জন সম্ভব না। ভারতীয় সৈন্য প্রত্যাহার ছিল প্রতীকী। উপর লেভেল এর অধিকাংশ আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্ধ শেখ মুজিবের সামনে জীহুজুর জীহুজুর বলে ভারতীয় চরদের কাছে তার সকল পরিকল্পনা ফাঁস করে দিতো।শেখ মুজিব তা ভালো করেই জানতেন।
শেখ মুজিব এটা ও ভালো করে জানতেন যে তার এবং স্বাধীন বাংলাদেশের বিরোধিতার জন্যই জাসদ তৈরী করা হয়েছে।পাশাপাশি নিজ সন্তানদের এবং পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের কর্মকাণ্ডেও তিনি ছিলেন পুরোপুরি হতাশ।হতাশ ছিলেন বলেই তিনি বলেছিলেন:

১. সবাই পায় সোনার খনি আর আমি পেয়েছি চোরের খনি।
২. আমার ভাগের কম্বলটা কই?


ভারতীয়রা তাদের মাড়োয়ারীদের দ্বারা তৈরী করেছিল দুর্ভিক্ষ। মুক্তিযুদ্ধপূর্ব এবং পরবর্তীতে আগত বৈদেশিক ত্রাণ সামগ্রী বিতরণের বদলে চলে যেতে লাগলো ইন্ডিয়ায়। শেখ মুজিব কারোই সাহায্য পাচ্ছিলেন না। ফলশ্রুতিতে হয়ে পড়েছিলেন সম্পূর্ণরূপে জনবিচ্ছিন্ন।ভারতীয়দের বেতনভুক্ত আওয়ামী নেতারা শেখ মুজিবকে বুঝতেই দেয়নি যে সে কতটা জনবিচ্ছিন্ন।আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ, যুবলীগ এবং জাতীয় রক্ষীবাহিনীর তাণ্ডবলীলায় দেশবাসী যখন অতিষ্ঠ ঠিক তখনি ভারতীয়রা কৌশলে শেখ মুজিবকে সরিয়ে দেয়। এই বিষয়টাকে অনেকেই বিভিন্ন ভাবে ব্যাখ্যা করে। যেমনঃ

১. মুজিব হত্যার সাথে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী এবং জিয়াউর রহমান জড়িত।
২. মুজিব হত্যায় খন্দকার মোস্তাক এবং মার্কিনীরা জড়িত।
৩. মুজিব হত্যায় স্বাধীনতা বিরোধীরা জড়িত।
৪. মুজিব হত্যায় পাকিস্তান জড়িত।

উপরোক্ত ৪টি'র একটিকেও আমি ব্যক্তিগতভাবে বিশ্বাস করি না। তবে মেজর ডালিম, কর্নেল ফারুক, কর্নেল রশিদের মতো অফিসারগণ যে মুজিব হত্যায় জড়িত ছিল তা আমি বিশ্বাস করি।আমি এটাও বিশ্বাস করি যে এই সকল অফিসাররা ব্যক্তিগত কোনো লোভ বা লালসার বশীভূত হয়ে এই হত্যাকান্ড ঘটায় নি।তবে কেন এই হত্যাকান্ড ঘটলো?

ভারতীয় espionage এজেন্সী RAW ইস্ট পাকিস্তানীদেরকে প্রথমেই বলেনি যে তাদের স্বাধীন হতে হবে। ভারতীয়রা প্রথমে পূর্ব পাকিস্তানীদেরকে গণতন্ত্রের কথা বলেছে যে তারা সংখ্যাগরিষ্ঠ। অবাধ নির্বাচন দিলে তারা জিতবে এবং সরকার গঠন করবে। অন্যদিকে সিন্ধ এর লোভী ভুট্টো কে প্রধান মন্ত্রিত্বের লোভ দেখিয়ে বলেছে, "প্রধান মন্ত্রী হতে হলে পাকিস্তানকে ভাঙতে হবে।
পাকিস্তান একত্রে থাকলে মুজিব ই হবে প্রধান মন্ত্রী।শেখ মুজিব এবং আওয়ামী লীগ নিরপেক্ষ নির্বাচনে জিতলেও RAW এর মদদপুষ্ট ভুট্টো পাকিস্তানী রাজনীতিতে প্রভাব খাটিয়ে শেখ মুজিবকে সরকার গঠন করতে দিলো না। অন্যদিকে RAW সিরাজুল আলম খানকে দিয়ে ক্ষমতা এবং অর্থের লোভ দেখিয়ে ছাত্রলীগ এর তৎকালীন নেতা আ স ম রব, আব্দুল কুদ্দুস মাখন, শাহজাহান সিরাজ এবং নূরে আলম সিদ্দিকীকে পাকিস্তান ভাঙ্গার পরিকল্পনায় যোগদানে রাজি করালো।ভারতীয় বেতনভুক্ত তাজউদ্দীনের মতো নেতারাও শেখ মুজিবকে দিয়ে স্বাধীনতার ঘোষণা দেয়াতে পারছিলো না।আওয়ামী লীগ এবং ছাত্রলীগ এর নেতারা শেখ মুজিবকে বহুবার হতবুদ্ধিময়(AWKWARD) পরিস্থিতিতে ফেলেছে যেখানে তাকে স্বাধীনতার কথা বলতে বাঁধ্য করানোর চেষ্টা করা হয়।তারপরেও,শেখ মুজিব স্বাধীনতার কথা বলেছেন গণতন্ত্রায়নে যাতে করে সংখ্যাগরিষ্ঠ দল হিসেবে আওয়ামী লীগ পাকিস্তানের সরকার গঠন করতে পারে। পক্ষান্তরে, ভারতীয়দের একমাত্র উদ্দেশ্য ছিল পাকিস্তানকে ভাঙ্গা।

আমরা শেখ মুজিব এর দূরদর্শীতা বুঝতে ব্যর্থ হলাম। গ্রহণ করলাম ভারতীয়দের স্বার্থে গড়া পাকিস্তান ভাঙ্গা নীতি। যোগ দিলাম মুক্তিযুদ্ধে। বুঝতেও পারলাম না যে আমরা এই যুদ্ধ আমরা কার জন্য করছি। এই যুদ্ধের পর যে দেশ স্বাধীন হবে তার সত্যিকার বেনিফিশিয়ারি কে?না জেনে লক্ষ লক্ষ বাংলাদেশীরা (তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানী)জীবন দিলো ভারতের স্বার্থে।

আমি কখনোই মেজর ডালিম, কর্নেল রশিদ বা হুদাদের সাথে দেখা বা কথা হয়নি তবে কর্নেল ফারুকের সাথে একবারই আমার দেখা হয়েছিল এবং দীর্ঘসময় কথা হয়েছে।আমি কোনো PSYCHIATRIST নই। তবে শেখ মুজিব প্রশ্নে কথা বার্তার সময় আমার মনে হয়েছে যে তাদেরকে দিয়ে শুধুমাত্র একটা কাজ করানো হয়েছে।কে করিয়েছে বা কেন করিয়েছে এ বিষয়ে তারা নিজেরাও হয়তো জানে না যেমনি বাংলাদেশীরাও জানতো না যে তারা কেন মুক্তিযুদ্ধ করছে বা পাকিস্তান ভাঙলে তাদের লাভ কি?

এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না যে একক কোনো ব্যক্তি মহান নেতা শেখ মুজিবের হত্যাকান্ড ঘটায়নি।যারাই ঘটিয়েছে তারা ১৫ই আগষ্ট ১৯৭৫ সালের পূর্বেই দেশে নিম্নরূপ পরিস্থিতি তৈরী করে:

১. ভারতীয় মাড়োয়ারীদের সহায়তায় দেশে দুর্ভিক্ষ তৈরী করা হয়।চাল, ডাল সহ অনেক খাদ্য দ্রব্য নদীতে পর্যন্ত ফেলে দেয়া হয়েছিল।
২. ভারতীয়দের ছত্রছায়ায় অনেক অপরাধ (হত্যা, ধর্ষণ, রাহাজানি) ঘটিয়ে তার দায়ভার রক্ষীবাহিনী, যুবলীগ এবং ছাত্রলীগ এর উপরে চাপানো হয়।
৩. শেখ মুজিবের ভাব মূর্তি নষ্ট করতে ভারতীয়রা বাংলাদেশী বুদ্ধিজীবীদের ব্যবহার করে।
৪. আওয়ামী লীগ এর অনেক নেতা ই RAW এর বেতন ভুক্ত থাকায় রাজনীতিবিদ এবং bureaucratদের ভিতরে দুর্নীতির প্রতিযোগীতা শুরু হয়।
৫. ইত্যাদি


সিরাজুল আলম খান সহ বাংলাদেশ ছাত্রলীগ এর আ স ম রব, আব্দুল কুদ্দুস মাখন, শাহজাহান সিরাজ এবং নূরে আলম সিদ্দিকী যেমন ভারতীয়দের স্বার্থে পাকিস্তান ভাঙ্গায় ভূমিকা রেখেছে ঠিক তেমনি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর বিপথগামী কিছু অফিসার শেখ মুজিব হত্যার সাথে জড়িত হয়ে ভারতের উদ্যেশ্যে সফল করেছে; তবে জিয়াউর রহমান বা বাংলাদেশ সেনাবাহিনী শেখ মুজিব হত্যায় জড়িত ছিল তা কোনো অবস্থাতেই যুক্তিযুক্ত বা বিশ্বাসযোগ্য নয়। খন্দকার মোস্তাক আহমেদ এর সাথে শেখ মুজিবের সম্পর্ক ১৪ই আগষ্ট ১৯৭৫ পর্যন্ত যথেষ্ট ভালো ছিল। ১৯৭৩ সালের নির্বাচনে খন্দকার মোস্তাক যখন হেরে যাচ্ছিলো, শেখ মুজিবের নির্দেশে ভোট বাক্স ঢাকায় এনে মোস্তাক কে নির্বাচিত ঘোষণা করা হয়েছিল।

শেখ মুজিবের হত্যাকাণ্ডের পর খন্দকার মোস্তাক উল্লাস প্রকাশ করেনি কিন্তু আওয়ামী লীগ এর প্রায় সকল নেতা স্মিতহাস্যে মোস্তাক মন্ত্রিসভায় শপথ নিয়েছিল।জাসদের সকলেই উৎসব করেছে। কেউ কেউ ট্যাঙ্কের উপরে উঠে দুহাত উপরে ছুড়ে উল্লাসও করেছে রাজপথে।ব্রিগেডিয়ার খালেদ মোশাররাফ এর নেতৃত্বাধীন অভ্যুত্থানের প্রাক্কালে জেনারেল জিয়া ছিলেন মিলিটারি হাজতে। জাসদের দখলে ছিল সবকিছু। কর্নেল তাহের এর নেতৃত্বে জেনারেল জিয়া কে মুক্ত করা হয়েছিল ভারতীয়দের পরবর্তী উদ্দেশ্য সফল করতে। কিন্তু জেনারেল জিয়া ধরে ফেলেছিলেন ভারতীয়দের উদ্বেশ্য।তিনি তার বুদ্ধিমত্তা এবং PRAGMATISM দিয়েই ঐদিন বাংলাদেশকে রক্ষা করেছিলেন। ওই দিন জেনারেল জিয়া যদি কর্নেল তাহের এর হাতের পুতুল হয়ে ভারতের জন্য কাজ করতেন তবে বাংলাদেশকে সম্পূর্ণরূপে নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে ভারতকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত হাসিনা শেখের জন্য অপেক্ষা করতে হতো না।

আমি ছোট বেলায় মহান নেতা শেখ মুজিব এবং জিয়াউর রহমান দুজনকেই দেখার সুযোগ হয়েছে। শুধু মাত্র দেখা। কিন্তু উনাদের সম্পর্কে জানার সুযোগ হয়েছে বই পুস্তকের মাধ্যমে আর কিছু ব্যক্তি(এই সকল ব্যক্তিবর্গ শেখ মুজিব এবং জিয়াউর রহমান এর সাথে ব্যক্তিগত এবং পেশাগত ভাবে জড়িত ছিলেন) যাদের কাছে আমি সারাজীবন ই কৃতজ্ঞ থাকবো। এই দুই নেতা ছিলেন স্বাধীনতাত্তর বাংলাদেশী জায়ান্ট। উনাদের তুলনা উনারাই।যাইহোক, জিয়াউর রহমান সম্পর্কে যতটুকুই জেনেছি, উনার রাষ্ট্রপতি হওয়ার স্বপ্ন ছিল জিরো। মহান স্রষ্টাই স্বয়ং হয়তো তার কপালে লিখেছিলেন যে জিয়াউর রহমান না চাইলেও তিনি দেশের রাষ্ট্রপতি হবেন।কর্নেল তাহের জিয়াউর রহমানকে মিলিটারি জেল থেকে বের করার পরও অনুমান করেননি যে তাকে দেশের দায়িত্ব নিতে হবে। ব্যক্তি জিয়া উচ্চাকাঙ্খী হলেও উচ্চাভিলাসী ছিলেন না। তার প্রমান মেলে যখন তার জুনিয়র এবং লেস কোয়ালিফায়েড সফি উল্লাহ কে সেনা প্রধান করা হয়।তিনি সফি উল্লাহ'র নিযুক্তি মেনে নিয়েই কাজে মনোনিবেশ করেছিলেন।দেশের ক্রান্তিলগ্নে তিনি বাধ্য হয়েছিলেন তার যোগ্যতা দিয়ে দেশের স্বাধীনতা এবং সার্বভৌমত্বকে রক্ষা করতে।

পাকিস্তানীরা বা তাদের অনুসারীরা শেখ মুজিবকে হত্যা করেছে এ ধরণের কথাবার্তা আলোচনার যোগ্য না।ভুট্টো'র নেতৃত্বে পশ্চিম পাকিস্তান ইস্ট পাকিস্তানের আলাদা হয়ে যাওয়াটাকে স্বাগত জানানোর মতো অবস্থা যেহেতু ভুট্টো পাকিস্তানের প্রধান মন্ত্রী হতে চেয়েছিলেন।এ ব্যাপারে RAW তাদের কথা রেখেছে। সুতরাং ভুট্টো বা পাকিস্তান শেখ মুজিবকে মারা'র কোনো কারণ ই ছিল না।মার্কিনিদের ও আগ্রহ ছিল না বাংলাদেশ নিয়ে মাথা ঘামানোর।(সিআইএ 'র ডিক্লাসিফায়েড ডকুমেন্ট তাই প্রমান করে।)পাশাপাশি স্বাধীনতা বিরোধীরা তখন খুবই ব্যস্ত তাদের ঘর গোছাতে। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর দল গুছানো নিয়ে তারা তখন মহা ব্যস্ত।শেখ মুজিবের সাধারণ ক্ষমা তাদের ভিতরে স্বস্তি এনে দেয়।

তাছাড়া শেখ মুজিব অধ্যাপক গোলাম আজমের সাথে সব সময়ই যোগাযোগ রাখতেন। জীবিতাবস্থায় তিনি সকল প্রশ্নের উত্তর তিনি দিয়ে গিয়েছেন।তার মৃত্যুর পর কিছু মানুষ যখন তাকে মহান নেতা শেখ মুজিবের মৃত্যুর জন্য দায়ী করে, কবর থেকেও জিয়া যেন তার গুরু গম্ভীর আওয়াজ দিয়ে বলছেন "এই ব্যটা, শেখ মুজিব একজন মহান জাতীয়তাবাদী নেতা ছিলেন। আমি তার নামেই স্বাধীনতা ঘোষণা করেছি। তিনিই আমাকে "বীর উত্তম" খেতাবে ভূষিত করেছেনা।তিনি আমাদের একজন মহান স্থপতি। Wish I Was There To Save Him.

একটা বিষয়ে আমার অবাক লাগে। মুজিব হত্যার দায়ভার অনেকের উপরেই চাপানো হয়েছে কিন্তু কেউই ভারতকে সরাসরি দায়ী করছে না। এর মূল কারন একটাই।আওয়ামী লীগ এর অধিকাংশ জ্যেষ্ঠ নেতারাই ছিল ভারতের বেতনভুক্ত।ছাড়া, ভারত শুধু নেতাদেরই ক্রয় করে বসে থাকে নি। ভারত শাহরিয়ার কবির, হাসান ইমাম সহ বহু বুদ্ধিজীবীকেও তাদের বেতনভুক্ত করতে সক্ষম হয়েছে।

আমরা আজ জাতিগত ভাবে বিভক্ত। যারা আওয়ামী লীগ এর সমর্থক তারা কোনো প্রকার তথ্য প্রমান ছাড়াই শেখ মুজিবের হত্যার দায়ভার শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের উপর চাপিয়ে দেয়; আবার বিএনপি'র সমর্থকরা শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান এর হত্যাকাণ্ডের দায়ভার হাসিনা শেখ এবং জেনারেল এরশাদ এর উপরে চাপিয়ে দেয়। বহুধাবিভক্ত এই জাতি কি আরো ও বিভক্তি ধারণ করার ক্ষমতা রাখে?চতুর ভারত তার স্বার্থে যদি আমাদের রন্ধ্রে রন্ধ্রে প্রবেশ করে থাকে সে সুযোগ আমরাই তাদের করে দিয়েছি। আমাদের বিভক্তির পুরো সুযোগ bloody ভারত কাজে লাগিয়েছে।কিন্তু আমরা চাইলে তা বন্ধ করতে পারি। আমরা পারি বাংলাদেশের দুই মহান দিকপাল শেখ মুজিব এবং শহীদ জিয়া'র প্রকৃত খুনিকে চিহ্নিত করে তাদের বিচার করতে। যদি আমরা বিচার করতে না ও পারি, খুনিদেরকে চিহ্নিত করার পর দ্বিধাবিভক্ত জাতি নিদেনপক্ষে জানার সুযোগ পাবে যে কাদের ইশারায় এই দুই মহান নেতাকে হত্যা করা হয়েছে।

মহান নেতা শেখ মুজিব এর হত্যাকাণ্ডের বিচার করতে হলে সিরাজুল আলম খান সহ জাসদ (হাসানুল হক ইনু/এ এস এম রব এবং অন্যান্য) এবং আওয়ামী লীগ এর (মতিয়া চৌধুরী এবং অন্যান্য) প্রথম সারির সকল নেতাকে গ্রেফতার করা হোক। গ্রেফতার করা হোক জেনারেল (অবঃ) সি আর দত্ত সহ ভারতীয় পোষ্য বুদ্ধিজীবিদেরকে।শেখ মুজিব হত্যার সঠিক বিচারের লক্ষ্যে বিশেষ ট্রাইবুনাল (স্বশস্ত্র বাহিনী এবং পুলিশ এর সমন্বয়ে গঠিত)গঠন করে মামলাটি তাদের হাতে হস্তান্তর করা উচিত। ট্রাইবুনালকে নির্বাহী বিভাগের বাহিরে রেখে বিশেষ ক্ষমতা প্রদান করা উচিত।

একই ভাবে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান এর হত্যার প্রকৃত বিচারের লক্ষ্যে হত্যা মামলাটি পুনরুজ্জীবিত করে বিশেষ ট্রাইবুনাল (স্বশস্ত্র বাহিনী এবং পুলিশ এর সমন্বয়ে গঠিত)গঠন করে মামলাটি তাদের হাতে হস্তান্তর করা উচিত। ট্রাইবুনালকে নির্বাহী বিভাগের বাহিরে রেখে বিশেষ ক্ষমতা প্রদান করা উচিত। জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জেনারেল এরশাদকে অনতিবিলম্বে গ্রেফতার করে ওই ট্রাইবুন্যালের কাছে হস্তান্তর করা উচিত।
অনেকের কাছে আমার এই লেখা হয়তো শুধুমাত্র স্বপ্ন হিসেবেই মনে হবে। কিন্তু জাতি হিসেবে বাংলাদেশীরা গর্বিত। আমাদের মেধারও অভাব নেই। অভাব রয়েছে সততার, দূরদৃষ্টির, একাত্মবোধের এবং দেশপ্রেমের। নিজের স্বার্থের ক্ষেত্রে দেশকেও যদি বিকিয়ে দিতে তবে আমরা কোন শ্রেণীর মানুষের সাথে তুল্য?

আমি আপনাদের চিন্তা করতে বলতেও দ্বিধা করছি।

JACOB MILTON
We Are The People
Courtesy: The Runner News
 

Back
Top Bottom