What's new

16th December 1971: From East Pakistan to Bangladesh

Thanks a million @asad71, for highlighting these historical facts.This archive will enrich our younger generations to learn the real truth, about our glorious history, even after our generation have finally breathed our last. Insha Allah.

19366548_1593106907369183_4436704789077603810_n.jpg

BASHANI.png
 
Last edited:
56701aafb2141.jpg

Indian Armed Forces looted 2700 crores worth of Arms and Equipment's after the end of our Freedom struggle.

মুক্তিযুদ্ধ শেষে ২৭০০ কোটি টাকার অস্ত্র-সরঞ্জাম লুট করেছিলো ভারতীয় সেনাবাহিনী !
June 23, 2017


জোগলু: জানেন যতিন ভাই, যুদ্ধ শেষে ২৭০০ কোটি টাকার অস্ত্র-সরঞ্জাম লুট করেছিলো ভারতীয় সেনাবাহিনী? ( অমৃতবাজার দৈনিক-১২ মে ১৯৭৪)
যতিন- আরে কী বলিস, ভারত আমাদের বন্ধু।
মুক্তিযুদ্ধে সাহায্য করেছে। : ৭৪ সালের চুক্তি সত্বেও ভারত তিন বিঘা করিডোর হস্তান্তর করেনি বাংলাদেশকে ! –
ভারত আমাদের বন্ধু। মুক্তিযুদ্ধে সাহায্য করেছে। : ভাই ৭৫ থেকে বাংলাদেশকে পানির নায্য হিস্যা দেয়নি। পদ্মা শুকিয়ে আজ বাথরুমের টাংকি ! বছরে ২০০ কোটি টাকার ফসল উৎপাদন বন্ধ ! –

ভারত আমাদের বন্ধু। মুক্তিযুদ্ধে সাহায্য করেছে। : ভাই খড়া মৌসুমে তারা বাধ দিয়ে পানি আটকে রাখে, আর ভরা মৌসুমে বাধ ছেড়ে দিয়ে বাংলাদেশকে ভাসিয়ে দেয়! –
ভারত আমাদের বন্ধু। মুক্তিযুদ্ধে সাহায্য করেছে! : সুল্ক জটিলতা সৃষ্টিকরে প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকার বানিজ্য ঘাটতি তৈরী করেছে ! –

ভারত আমাদের বন্ধু। মুক্তিযুদ্ধে সাহায্য করেছে। : প্রতিবাদের পরেও টিপাইমুখে বাধ দিচ্ছে – সিলেটের ১৬ জেলা মরুভূমি হয়ে যাবে ! –

ভারত আমাদের বন্ধু। মুক্তিযুদ্ধে সাহায্য করেছে। : হিন্দি চ্যানেল প্রচার করতে ৩০০০থেকে ৪৫০০ কোটি টাকা ভারতকে দেয়া হয়। কিন্তু বাংলাদেশী চ্যানেল ভারতে নট অ্যালাউড! –

ভারত আমাদের বন্ধু। মুক্তিযুদ্ধে সাহায্য করেছে। : ভাই -গত ৪৪ বছরে ৬১হাজার বাঙ্গালীকে সীমান্তে হত্যা করেছে !! –

ভারত আমাদের বন্ধু। মুক্তিযুদ্ধে সাহায্য করেছে। : আমাদের বিশ্ব ঐতিহ্য সুন্দরবন! সেই সুন্দর বনকে ধ্বংসের জন্য তারা উঠেপড়ে লেগেছে! –

ভারত আমাদের বন্ধু, মুক্তিযুদ্ধে সাহায্য করেছে! : আপনার গর্বের জায়গা ‘ক্রিকেট’ নিয়েও ষড়যন্ত্র শুরু করেছে, কেমন ছোটলোক !? –

ভারত আমাদের বন্ধু। মুক্তিযুদ্ধে সাহায্য করেছে।

: আশ্চর্য ভাই, সাংস্কৃতিক আগ্রাসন, অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে নির্লজ্জ হস্তক্ষেপ, মাথারউপর দাদাগিরি সহ নানাভাবে বাংলাদেশ আজ ধর্ষিত ভারতের কাছে ! –

ভারত আমাদের বন্ধু। মুক্তিযুদ্ধে সাহায্য করেছে। : এই যে আমাদের গর্বের সেনাবাহিনী, তাদেরকে নিয়েও তারা কত ষড়যন্ত্র করছে, বিডিআর বিদ্রোহ থেকে আরো কত কী! –

ভারত আমাদের বন্ধু। মুক্তিযুদ্ধে সাহায্য করেছে! : ভারত ৪২ বছর ধরে স্বাধীনতায় সহযোগিতার নামে বাংলাদেশ শোষণ করছে ! –

তবুও..তোরে আর কয়বার বলব, ভারত আমাদের বন্ধু। মুক্তিযুদ্ধে সাহায্য করেছে। : এই তো কয়দিন আগে বাংলাদেশী জার্নালিস্টদের বলেছে ”বাংলাদেশী পাসপোর্ট? নট এলাউড, কিউ কি আপ বাংলাদেশকা সিটিজেন হ্যায় ! একরকম গলা ধাক্কাদিয়ে হোটেল থেকে বের করে দিয়েছে আপনার বন্ধুরা! – ব্যাটা তুই তো দেখি রাজাকার ! পাকিস্তান চলে যা। জোগলু পাকিস্তান যাওয়ার আগে, কোমায় চলে গেছে!

zia 6.jpg
 
Last edited:
View attachment 407780
Indian Armed Forces looted 2700 crores worth of Arms and Equipment's after the end of our Freedom struggle.

মুক্তিযুদ্ধ শেষে ২৭০০ কোটি টাকার অস্ত্র-সরঞ্জাম লুট করেছিলো ভারতীয় সেনাবাহিনী !
June 23, 2017


জোগলু: জানেন যতিন ভাই, যুদ্ধ শেষে ২৭০০ কোটি টাকার অস্ত্র-সরঞ্জাম লুট করেছিলো ভারতীয় সেনাবাহিনী? ( অমৃতবাজার দৈনিক-১২ মে ১৯৭৪)
যতিন- আরে কী বলিস, ভারত আমাদের বন্ধু।
মুক্তিযুদ্ধে সাহায্য করেছে। : ৭৪ সালের চুক্তি সত্বেও ভারত তিন বিঘা করিডোর হস্তান্তর করেনি বাংলাদেশকে ! –
ভারত আমাদের বন্ধু। মুক্তিযুদ্ধে সাহায্য করেছে। : ভাই ৭৫ থেকে বাংলাদেশকে পানির নায্য হিস্যা দেয়নি। পদ্মা শুকিয়ে আজ বাথরুমের টাংকি ! বছরে ২০০ কোটি টাকার ফসল উৎপাদন বন্ধ ! –

ভারত আমাদের বন্ধু। মুক্তিযুদ্ধে সাহায্য করেছে। : ভাই খড়া মৌসুমে তারা বাধ দিয়ে পানি আটকে রাখে, আর ভরা মৌসুমে বাধ ছেড়ে দিয়ে বাংলাদেশকে ভাসিয়ে দেয়! –
ভারত আমাদের বন্ধু। মুক্তিযুদ্ধে সাহায্য করেছে! : সুল্ক জটিলতা সৃষ্টিকরে প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকার বানিজ্য ঘাটতি তৈরী করেছে ! –

ভারত আমাদের বন্ধু। মুক্তিযুদ্ধে সাহায্য করেছে। : প্রতিবাদের পরেও টিপাইমুখে বাধ দিচ্ছে – সিলেটের ১৬ জেলা মরুভূমি হয়ে যাবে ! –

ভারত আমাদের বন্ধু। মুক্তিযুদ্ধে সাহায্য করেছে। : হিন্দি চ্যানেল প্রচার করতে ৩০০০থেকে ৪৫০০ কোটি টাকা ভারতকে দেয়া হয়। কিন্তু বাংলাদেশী চ্যানেল ভারতে নট অ্যালাউড! –

ভারত আমাদের বন্ধু। মুক্তিযুদ্ধে সাহায্য করেছে। : ভাই -গত ৪৪ বছরে ৬১হাজার বাঙ্গালীকে সীমান্তে হত্যা করেছে !! –

ভারত আমাদের বন্ধু। মুক্তিযুদ্ধে সাহায্য করেছে। : আমাদের বিশ্ব ঐতিহ্য সুন্দরবন! সেই সুন্দর বনকে ধ্বংসের জন্য তারা উঠেপড়ে লেগেছে! –

ভারত আমাদের বন্ধু, মুক্তিযুদ্ধে সাহায্য করেছে! : আপনার গর্বের জায়গা ‘ক্রিকেট’ নিয়েও ষড়যন্ত্র শুরু করেছে, কেমন ছোটলোক !? –

ভারত আমাদের বন্ধু। মুক্তিযুদ্ধে সাহায্য করেছে।

: আশ্চর্য ভাই, সাংস্কৃতিক আগ্রাসন, অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে নির্লজ্জ হস্তক্ষেপ, মাথারউপর দাদাগিরি সহ নানাভাবে বাংলাদেশ আজ ধর্ষিত ভারতের কাছে ! –

ভারত আমাদের বন্ধু। মুক্তিযুদ্ধে সাহায্য করেছে। : এই যে আমাদের গর্বের সেনাবাহিনী, তাদেরকে নিয়েও তারা কত ষড়যন্ত্র করছে, বিডিআর বিদ্রোহ থেকে আরো কত কী! –

ভারত আমাদের বন্ধু। মুক্তিযুদ্ধে সাহায্য করেছে! : ভারত ৪২ বছর ধরে স্বাধীনতায় সহযোগিতার নামে বাংলাদেশ শোষণ করছে ! –

তবুও..তোরে আর কয়বার বলব, ভারত আমাদের বন্ধু। মুক্তিযুদ্ধে সাহায্য করেছে। : এই তো কয়দিন আগে বাংলাদেশী জার্নালিস্টদের বলেছে ”বাংলাদেশী পাসপোর্ট? নট এলাউড, কিউ কি আপ বাংলাদেশকা সিটিজেন হ্যায় ! একরকম গলা ধাক্কাদিয়ে হোটেল থেকে বের করে দিয়েছে আপনার বন্ধুরা! – ব্যাটা তুই তো দেখি রাজাকার ! পাকিস্তান চলে যা। জোগলু পাকিস্তান যাওয়ার আগে, কোমায় চলে গেছে!
There were some hi tech ammunition and small arm manufacturing facilities,what happened to them?
 

56701aafb2141.jpg

Indian Armed Forces looted Arms and Equipment worth 2,700 crores taka after the Liberation War
মুক্তিযুদ্ধ শেষে ২৭০০ কোটি টাকার অস্ত্র-সরঞ্জাম লুট করেছিলো ভারতীয় সেনাবাহিনী !
June 23, 2017


জোগলু: জানেন যতিন ভাই, যুদ্ধ শেষে ২৭০০ কোটি টাকার অস্ত্র-সরঞ্জাম লুট করেছিলো ভারতীয় সেনাবাহিনী? ( অমৃতবাজার দৈনিক-১২ মে ১৯৭৪)
যতিন- আরে কী বলিস, ভারত আমাদের বন্ধু। মুক্তিযুদ্ধে সাহায্য করেছে। : ৭৪ সালের চুক্তি সত্বেও ভারত তিন বিঘা করিডোর হস্তান্তর করেনি বাংলাদেশকে !

– ভারত আমাদের বন্ধু। মুক্তিযুদ্ধে সাহায্য করেছে। : ভাই ৭৫ থেকে বাংলাদেশকে পানির নায্য হিস্যা দেয়নি। পদ্মা শুকিয়ে আজ বাথরুমের টাংকি ! বছরে ২০০ কোটি টাকার ফসল উৎপাদন বন্ধ !

– ভারত আমাদের বন্ধু। মুক্তিযুদ্ধে সাহায্য করেছে। : ভাই খড়া মৌসুমে তারা বাধ দিয়ে পানি আটকে রাখে, আর ভরা মৌসুমে বাধ ছেড়ে দিয়ে বাংলাদেশকে ভাসিয়ে দেয়!

– ভারত আমাদের বন্ধু। মুক্তিযুদ্ধে সাহায্য করেছে! : সুল্ক জটিলতা সৃষ্টিকরে প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকার বানিজ্য ঘাটতি তৈরী করেছে ! – ভারত আমাদের বন্ধু। মুক্তিযুদ্ধে সাহায্য করেছে। : প্রতিবাদের পরেও টিপাইমুখে বাধ দিচ্ছে – সিলেটের ১৬ জেলা মরুভূমি হয়ে যাবে !

– ভারত আমাদের বন্ধু। মুক্তিযুদ্ধে সাহায্য করেছে। : হিন্দি চ্যানেল প্রচার করতে ৩০০০থেকে ৪৫০০ কোটি টাকা ভারতকে দেয়া হয়। কিন্তু বাংলাদেশী চ্যানেল ভারতে নট অ্যালাউড!

– ভারত আমাদের বন্ধু। মুক্তিযুদ্ধে সাহায্য করেছে। : ভাই -গত ৪৪ বছরে ৬১হাজার বাঙ্গালীকে সীমান্তে হত্যা করেছে !! – ভারত আমাদের বন্ধু। মুক্তিযুদ্ধে সাহায্য করেছে। : আমাদের বিশ্ব ঐতিহ্য সুন্দরবন! সেই সুন্দর বনকে ধ্বংসের জন্য তারা উঠেপড়ে লেগেছে!

– ভারত আমাদের বন্ধু, মুক্তিযুদ্ধে সাহায্য করেছে! : আপনার গর্বের জায়গা ‘ক্রিকেট’ নিয়েও ষড়যন্ত্র শুরু করেছে, কেমন ছোটলোক !?

– ভারত আমাদের বন্ধু। মুক্তিযুদ্ধে সাহায্য করেছে। : আশ্চর্য ভাই, সাংস্কৃতিক আগ্রাসন, অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে নির্লজ্জ হস্তক্ষেপ, মাথারউপর দাদাগিরি সহ নানাভাবে বাংলাদেশ আজ ধর্ষিত ভারতের কাছে !

– ভারত আমাদের বন্ধু। মুক্তিযুদ্ধে সাহায্য করেছে। : এই যে আমাদের গর্বের সেনাবাহিনী, তাদেরকে নিয়েও তারা কত ষড়যন্ত্র করছে, বিডিআর বিদ্রোহ থেকে আরো কত কী!

– ভারত আমাদের বন্ধু। মুক্তিযুদ্ধে সাহায্য করেছে! : ভারত ৪২ বছর ধরে স্বাধীনতায় সহযোগিতার নামে বাংলাদেশ শোষণ করছে !

– তবুও..তোরে আর কয়বার বলব, ভারত আমাদের বন্ধু। মুক্তিযুদ্ধে সাহায্য করেছে। : এই তো কয়দিন আগে বাংলাদেশী জার্নালিস্টদের বলেছে ”বাংলাদেশী পাসপোর্ট? নট এলাউড, কিউ কি আপ বাংলাদেশকা সিটিজেন হ্যায় ! একরকম গলা ধাক্কাদিয়ে হোটেল থেকে বের করে দিয়েছে আপনার বন্ধুরা! – ব্যাটা তুই তো দেখি রাজাকার ! পাকিস্তান চলে যা। জোগলু পাকিস্তান যাওয়ার আগে, কোমায় চলে গেছে!
http://banglamail71.info/archives/486

15940986_1412613912085151_433830021695330170_n.jpg

The India Doctrine
13 January · 10 Lacks refugees died in Indian Refugee Camps during 1971: Dr. Zafarullah Choudhury

৭১-এ ভারতে ১০ লাখ শরণার্থী মারা গেছে : ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী


একাত্তরে স্বাধীনতা যুদ্ধের সময়ে ভারতে আশ্রয় নেওয়া এক কোটি শরণার্থীর মধ্যে অন্তত দশ লাখ শরণার্থীর মৃত্যু হয়েছে। খাবারের অভাবে ও রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে তারা। এদের বেশিরভাগ শিশু ও বৃদ্ধ। এই তথ্য জানিয়েছেন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রধান । সম্প্রতি রাজধানীর ধানমন্ডিতে নিজের বাসভবনে এ প্রতিবেদকের সাথে আলাপকালে এই তথ্য জানান তিনি। তিনি বলেন, ‘বিভিন্ন রোগে মৃত্যুবরণকারী এই দশ লাখ শরণার্থীর কোন হিসেব বাংলাদেশ বা ভারত সরকারের কাছে আছে বলে মনে হয় না।

’ ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী জানান, স্বাধীনতা যুদ্ধ যখন শুরু হয় তখন তিনি ছিলেন ব্রিটেনে। ১৯৭১ সালের মে মাসে তিনি এবং ডা. এম এ মোবিন ব্রিটেন থেকে চলে আসেন।

উদ্যোগ নেন মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসা করার। ওই সময়ে বাংলাদেশ মেডিক্যাল এ্সোসিয়েশন এবং যুক্তরাজ্য যৌথভাবে ডা. এম এ মোবিন ও ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীকে ভারতে পাঠায়।

তখন মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসায় বিশ্রামগঞ্জে নির্মিত হয় ৪৮০ শয্যার অস্থায়ী ‘বাংলাদেশ ফিল্ড হাসপাতাল’। সেখানের পরিচালক ছিলেন সেনা কর্মকর্তা ও চিকিৎসক সিতারা রহমান। চিকিৎসক ছিলেন ডা. নাজিম ও ডা. আক্তার। কোথায় কোথায় শরণার্থীরা ছিলেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘মংডু এলাকা থেকে শুরু করে সর্বত্র শরণার্থী ছিলো। ওখানে ছিলো, ত্রিপুরাতে ছিলো, আসামে ছিলো, পশ্চিমবঙ্গে ছিলো, মনিপুরে ছিলো, এমনকি মধ্যপ্রদেশ রাজ্যেও ছিলো।

মধ্যপ্রদেশ ভারতের মাঝখানে। সেখানে পর্যন্ত রিফিউজি ছিলো। ভুলে গেলে চলবে না, আমাদের এক কোটি রিফিউজি ছিলো।’ এই চিকিৎসক বলেন, ‘৯ মাসে রিফিউজি ক্যাম্পে কমপক্ষে ১০ লাখ রিফিউজি মারা গেছে। বেশিও হতে পারে। মারা গেছে নিউমোনিয়ায়, ডায়রিয়ায়, কলেরায়, পুষ্টিহীনতায়, খাওয়ার অভাবে, ঠাণ্ডায়। বেশিরভাগ মারা গেছে শিশু আর বয়োবৃদ্ধরা। তারা নিউমোনিয়া, ব্রংকাইটিস- এসব রোগে আক্রান্ত হতো। মধ্যপ্রদেশ রাজ্যে শীত বেশি, কিন্তু শরণার্থীদের শীতবস্ত্রের অভাব ছিলো।’

‘একজন ইঞ্জিনিয়ার ছিলেন, নজরুল ইসলাম। তার স্ত্রী হাজেরা ঢাকার কোন একটা কলেজের প্রিন্সিপাল ছিলেন। নজরুলের নামে একটা রাস্তা আছে। ওনার সেরিব্রাল ম্যালেরিয়া হয়েছিলো। আমরা তার ঔষুধ জোগাড় করতে পারিনি। সেরিব্রাল ম্যালেরিয়ার ইনজেকশন ও ভাল ওষুধ পাওয়া যেত না। আমরা যুক্তরাজ্য থেকে তা আনতে আনতে ভদ্রলোক মারা যান।’ ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী জানান, মতিন নামের একজন মেজর ছিলেন। তার ছেলে নিউমোনিয়ায় মারা যায়।

মেজর মতিনের পরিবারের ইচ্ছে ছিলো যে, বাচ্চাটার কবর বাংলাদেশে হবে। সেই রাতেই মুক্তিযোদ্ধারা তাকে নিয়ে বাংলাদেশের মাটিতে এসে কবর দেন। ডা. জাফরুল্লাহ বলেন, ‘তখনকার দিনে ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট আজকের দিনের মতো এতো ভাল ছিলো না। বর্তমানে ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট অত্যন্ত উন্নত পর্যায়ে; আমরা ইমিডিয়েটলি মুভ করতে পারি। রোহিঙ্গারা আসছে, আমরা ঘটনাস্থলে গিয়ে হাজির হয়েছি দেখতে। কোথায় কি করা যাবে, না যাবে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় হাজির হয়েছে। তারা হিসেব রাখছে কত আসছে যাচেছ। ১৯৭১ সালে শরণার্থীদের খবর রাখার ব্যবস্থা এতো উন্নত ছিলো না।’ এই চিকিৎসক বলেন, ‘অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক যে, আজকে আমরা জাতি হিসেবে স্বাধীনতার কথা বলি কিন্তু এই যে ভারতে দশ লাখের মত লোক মারা গেছে তার তালিকা আজ পর্যন্ত হয়নি। বাংলাদেশ সরকারও করেনি, ভারতীয়রাও দেয়নি। এই যে আমরা ত্রিশ লাখ, ত্রিশ লাখ করছি, এই শহীদদের কারো কোন নাম ঠিকানা নেই। কিন্তু আমাদের পরবর্তী প্রজন্ম যারা, তারা তো জানতে চাইবে। তিনি বলেন, ‘তালিকা থাকলে সেই তালিকায় যদি কেউ তার স্বজনের নাম দেখতেন তাহলে তারাও গর্বিত হতেন।’

http://amar-desh24.com/bangla/index.php/details/focus/3476

There were some hi tech ammunition and small arm manufacturing facilities,what happened to them?
The well equipped mighty Supa Pawa Indian Army were shit scared of our Rag Tag small Army and the genuine patriotic Freedom Fighters and never dared to venture outside their bases located in former Pakistani Cantonments. Thus, some installations were untouched where there were presence of Bangladesh Army. Rajendrapur Ordinance was one amongst them, as I recall.

k.jpg

1.jpg

2.jpg


3.jpg

5.jpg

7.jpg
 
There were some hi tech ammunition and small arm manufacturing facilities,what happened to them?

We had successfully hid them. Our BOF Gazipur, established in the 60's, flourishes. Actually Indians couldn't imagine arms and ammo were being manufactured in BD/E Pak.
 
9.jpg

11.jpg

14.jpg

15.jpg


The real history about Deceleration of our Independence on 26th March 1971 was NOT made by BB Sheikh Mujibur Rahman nor by any others, this decleration was announced by Saheed President Ziaur Rahman, Bir Uttam, from Kalurghat Radio Station, Chittogong.

zia 6.jpg
 
@asad71 @BANGLAR BIR Gentleman have you gone through work done by Dalim.

1. Dalim is a potential factor for resurrection if projected correctly. Right now he is limited to an FB account only.

2. Dalim has family connections with the Sheikhs. He is related to BRAC chief Abed. BRAC is the largest NGO in the world even having ops in Afghanistan for decades. Understandably BRAC is a darling of the West. Dalim is also related to Litu, head of Bengal Foundation which is a RAW platform in BD. For years Litu has been suspected to be an American plant through his late uncle Prof Razzaq who was a close friend of Kissinger.
 
Last edited:
1. Dalim is a potential factor for resurrection if projected correctly. Right now he is limited to an FB account only.

2. Daim has family connections with the Sheikhs. He is related to BRAC chief bed. BRAC is the largest NGO in the world even having ops in Afghanistan for decades. Understandably BRAC is a darling of the West. Dalim is also related to Litu, head of Bengal Foundation which is a RAW platform in BD. For years Litu has been suspected to be an American plant through his late uncle Prof Razzaq who was a close friend of Kissinger.
1.He has some dirty secrets with him,both bd and India feel uneasy about him.
2.Sheikhs are hungry for his blood.
3.He has been labeled as a traitor.
 
If you have headache on one side you could still sleep, however if headaches are on both sides it would indeed be difficult to sleep( Meaning both Pakistan+Bangladesh). Indira Gandhi.
indira.jpg
 
Last edited:
Bengalis are most ungrateful people on the earth. Nowonder pakistanis are happy that you got separated form their nation.

@PAKISTANFOREVER

I dont blame tham, after saving honor of some of their honor what we got from these napak race ? Gaaliya.
 
Bangladesh's Liberation War: Sheikhs Mubijb's Agenda.
বাঙালির মুক্তিযুদ্ধেঃ অন্তরালের শেখ মুজিব

18921862_1570893062923901_2066402571709896402_n.jpg

মোস্তাফা আনোয়ার খান

১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য কী ছিল, শেখ মুজিবুর রহমান কী চেয়েছিল এবিষয়ে ভারতের সাহায্য নিয়ে পাকিস্তান ভাঙ্গার প্রধান স্বপ্নদ্রষ্টা, শেখ মুজিবুর রহমানের একমাত্র পরামর্শদাতা, একান্ত আপনজন দাবিদার, ডাঃ কালিদাস বৈদ্যের বই ‘বাঙালির মুক্তিযুদ্ধে অন্তরালের শেখ মুজিব’।

নিজের পরিচয় দিতে গিয়ে কালিদাস বৈদ্য বলেছেন, ভারতের পূর্ব-দক্ষিণ সীমান্তে নদী বিধৌত বাংলার এককালের শস্য ভাণ্ডার বরিশাল জেলা। তার উত্তর পশ্চিমের শেষ প্রান্তে আমাদের ছোট গ্রাম সামন্তগাতি। গ্রামের পূব পাশ দিয়ে বয়ে গিয়েছে মধুমতী নদী। আমাদের এলাকায় বলেশ্বর নামে খ্যাত। এই গ্রামের একটি মধ্যবিত্ত কৃষক পারিবারে আমি জন্মেছিলাম ১৯২৮ সালের ১লা মার্চ। বাবা রাজেন্দ্রনাথ বৈদ্য। মা গুণময়ী বৈদ্য।

কালিদাস বৈদ্যের বইটির ভূমিকা লিখেছেন, পবিত্র কুমার ঘোষ, যিনি সাংবাদিক ও কলকাতা থেকে প্রকাশিত “দৈনিক বর্তমান” এর উপদেষ্টা । ভুমিকায় তিনি লিখেছেন, “দেশ ভাগের সময় কালিদাস ছিলেন ছাত্র, অন্যদের সঙ্গে কোলকাতায় চলেও এসেছিলেন। কিন্তু ১৯৫০ সালেই তিনি ফিরে গিয়েছিলেন ঢাকায়, পাকিস্তানকে ভেঙে দেওয়ার ব্রত নিয়ে। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ থেকে তিনি এম.বি.বি.এস পাশ করেন, ঢাকাতেই ডাক্তারি প্রাকটিস শুরু করে ভালো পসার জমিয়ে ফেলেন। কিন্তু তিনি মেডিক্যাল কলেজে ছাত্র থাকার সময় ছাত্র রাজনীতি সংগঠিত করতে শুরু করেছিলেন, ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনে উলেখযোগ্য ভুমিকা নিয়েছিলেন। মুজিবর রহমানের সঙ্গে তাঁর পরিচয় গড়ে ওঠে তখন থেকেই”।
লেখকের কথায় কালিদাস বৈদ্য লিখেছেন, “ বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা না করে মুজিবের স্বেচ্ছায় গ্রেফতার বরণ ও যুদ্ধকালে বাংলাদেশ সরকার সহ নেতাদের আচরণ দেখে, আমরা বুঝেছিলাম, আমাদের সব প্রচেষ্টা ব্যর্থ। তাই যুদ্ধ শেষ হবার আগেই আমরা চোদ্দো জন হিন্দু নেতা একত্রে বসে নতুন করে স্বাধীনতা সংগ্রামের সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হই। পরে Law Continuation order of 1971 জারি করে মুজিব বুঝিয়ে দিলেন যে তার সরকার পাকিস্তানের Successor সরকার। তাতে সেখানে ইসলামিক জাতীয়তাবাদ স্বীকৃতি পেল। মুছে গেল বাঙালি মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস”।

বইটিতে মুসলমানদের ধর্ম , ইতিহাস, ঐতিহ্যের বিষয়ে ধারনা দিতে গিয়ে কালিদাস বৈদ্য লিখেছেন, “শিক্ষাদীক্ষায় মুসলমানদের অনীহার কারণও ইসলামের শিক্ষা। শিক্ষাদীক্ষা ও নৈতিক দিক দিয়ে উন্নত এবং মানুষ গড়ার কোনো প্রেরণা ইসলামে নেই। ইসলাম মানুষকে সম্পদ সৃষ্টিতে কোনো প্রেরণা যোগায় না। ইসলামের শিক্ষা হল জেহাদ করে পরের সম্পদ ঘরে আনতে হবে। চুরি, ডাকাতিতেই ইসলামের প্রেরণা। ইসলামি মতে ইসলাম হল শ্রেষ্ট পথ। এই পথের পথিক বলে একজন মুসলমান পাহাড় প্রমাণ পাপ করলেও সৃষ্টিকর্তার ক্ষমা পাবে। পরলোকে জান্নাত স্বর্গ বাসী হবে”।

সূরা তওবার ৫নং আয়াত, সূরা নিসার ৮৯নং আয়াত, সূরা আনফালের ৩৯নং আয়াত, সূরা মোহাম্মদ-এর ৪নং আয়াতের অপব্যাখ্যা করে তিনি আরো লিখেছেন যে, ’৭১ সালে এদেশের মুসলমানরা আল্লার হুকুম হিসাবে এই আয়াতগুলো তামিল করতে গিয়ে ত্রিশ লক্ষ হিন্দুকে হত্যা করেছে, হিন্দুদের বাড়িঘর লুণ্ঠনের পর তা জ্বালিয়ে দিয়েছে। হিন্দু নারীদের নির্যাতনের পর ধর্ষণ করেছে।

কালিদাস বৈদ্য পাকিস্তান ভাঙ্গার ব্রত নিয়ে ১৯৫১ সালের শেষ দিকে তিনি চিত্তরঞ্জন ছুতার ও নিরুদ মজুমদার ঢাকায় আসেন। বইয়ের ৪৩ পৃষ্ঠায় তিনি লিখেছেন, “…আমরা তিনজন যুবক কলকাতা থেকে ঢাকায় গেলাম। চিত্তরঞ্জন সুতার, নীরদ মুজমদার ও আমি। তখন ১৯৫১ সালের শেস দিক। নীরদবাবু ও চিত্তরঞ্জন সুতার সমাজসেবার কাজে যোগ দিলেন। আমি ভর্তি হলাম ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের এম বি বি এস এর প্রথম বর্ষে। আমাদের তিনজনের আলোচনা ও সিদ্ধান্ত অনুযায়ী চিত্তবাবু ও নীরদবাবু সমাজসেবার মাধ্যমে গণসংযোগ গড়ে তোলার চেষ্টা করতে লাগলেন। আমি নিলাম ছাত্রদের মধ্যে গণসংযোগ গড়ে তোলার কাজ। তখন ঢাকার সীমানা ও বুদ্ধিজীবীর সংখ্যা ছিল সীমিত। ছাত্ররাই সব বিষয়ে অগ্রণী ভূমিকা পালন করত”।
বইটির অন্যতম আলোচ্য বিষয় শেখ মুজিবর রহমানের সাথে লেখকের যোগাযোগ ও পরিকল্পনা।রয়েছে শেখ মুজিব ও আওয়ামীলীগ সম্পর্কে লেখকের তীক্ষ্ণ সমালোচনামূলক পর্যবেক্ষণও। শেখ মুজিবের গ্রাম, বেঁড়ে ওঠা ও কলকাতার কলেজ জীবন নিয়ে লেখক মন্তব্য করেছেন।১৯৪৬ সালে কলকাতায় সংগঠিত কুখ্যাত দাঙ্গায় (যেখানে প্রায় ৫০০০ মানুষ খুন যার ৭৫% ছিল মুসলমান) শেখ মুজিবের ভূমিকা সম্পর্কে কালিদাস বৈদ্য লিখেন;

‘‘গোপালগঞ্জ স্কুল থেকে ম্যাট্রিক পাশ করে কলকাতায় ইসলামিয়া (বর্তমান মৌলানা আজাদ) কলেজে ভর্তি হন।…এইভাবে কলেজ শিক্ষার সাথে মাদ্রাসায় ইসলামি শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে এবং প্রধানমন্ত্রী সুরাবর্দির কাছে রাজনৈতিক শিক্ষা পেয়ে মুজিব গড়ে উঠলেন ইসলামের এক নির্ভীক সেনাপতি রূপে।
এভাবে ইসলামের সেনাপতি রূপেই তিনি পাকিস্তান আন্দোলনে নামলেন এবং ১৯৪৬ সালের ১৬ ই আগষ্টের নৃশংস কলকাতার দাঙ্গায় নেতৃত্ব দিলেন।পাকিস্তান সংগ্রামের তিনিই হলেন পূর্বাঞ্চলের প্রধান সৈনিক।সুরাবর্দির প্রধান সেনাপতি ও ডান হাত শেখ মুজিব। সেই সঙ্গে মুসলিম ছাত্র লিগের একজন অন্যতম নেতা।যখন স্বাধীনতা আন্দোলনে হাজার হাজার হিন্দু যুবক হাসিমুখে প্রাণ দিচ্ছিল,হাজার হাজার হিন্দু দেশপ্রেমিক কারা অন্তরালে কাঁদছিল এবং হাজার হাজার আহত পঙ্গু যুবক মৃতুর দিন গুনছিল,তখন যুবক শেখ মুজিব স্বাধীনতা আন্দোলনে যোগ না দিয়ে হিন্দুর বিরুদ্ধে জেহাদের পরিকল্পনায় ব্যস্ত ছিলেন।এভাবে জেহাদের ডাক দিয়ে হিন্দুর বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেন।আর ব্রিটিশের সঙ্গে সেই ঘৃণ্য দেশভাগ চক্রান্তে লিপ্ত ছিলেন। ’’

“শোনা যায় কলকাতার মহা-নিধন দাঙ্গায় মুজিব নিজ হাতে ছোরা নিয়ে রাস্তায় নেমেছিলেন- দাঙ্গায় নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। মুজিব ব্যক্তিগত ভাবে সুরাবর্দির মন্ত্রশিষ্য ছিলেন। কাজইে গুরু যে দাঙ্গা আরম্ভ করেছিলেন তাতে শিষ্য যোগ দেবে তাতে আর আশ্চর্য কি? তবে দাঙ্গায় হিন্দু খুন করার শিক্ষা মুজিব তাঁর গ্রাম থেকেই পেয়েছিলেন। কারণ আমাদের অঞ্চলে হিন্দু মুসলমানে সংঘর্ষ বাঁধলে ছেরামকান্দি, ডেমরাডাঙা ও টুঙ্গিপাড়ার মুসলমানরাই মুসলমানদের নেতৃত্ব দিত”। (পৃষ্ঠা-৫৪,৫৫,৫৬) (এই বিষয়ে আসল ঘটনা জানতে পড়ূন পাকিস্তান দাবীতে ডাইরেক্ট একশন ঘোষণার প্রতিক্রিয়ায় হিন্দুদের হত্যাযজ্ঞ)

১৯৭০ সালের নির্বাচন
আইয়ুব খাঁ’র সেনা শাসনের শেষে যখন পাকিস্তানে গনতন্ত্রে প্রত্যাবর্তনের সুযোগ সৃষ্টি হয়,তখন নির্বাচনে লড়াই করার জন্য ‘হিন্দু লবি’র সদস্যরা কালিদাস বৈদ্যের নেতৃত্বে ‘গণমুক্তি দল’ নামে একটি হিন্দুত্ববাদী রাজনৈতিক দল গঠন করে। তাঁর দাবী অনুসারে স্বায়ত্বশাসনের আড়ালে পূর্ব পাকিস্তানের স্বাধীনতাই ছিল এই দলের লক্ষ্য।কালিদাস লিখেন; ‘ গণমুক্তি দলের সমস্ত জনসভায় মুজিবের প্রশংসা ও তার নেতৃত্বের প্রতি অবিচল বিশ্বাসের উল্লেখ করেই আমরা আমাদের বক্তব্য রাখতে থাকি।’ (পৃষ্ঠা ১১৬)।

‘সেই সময় মৌলানা ভাসানী পাকিস্তানকে তালাক দেবার আহবান জানাচ্ছিলেন। কিন্তু তার সেই ডাকের ভিত্তি ছিল ইসলামি সংস্কৃতি। কিন্তু ইসলামি ভিতের উপর পূর্ববঙ্গ স্বাধীন হবে তা আমরা মেনে নিতে পারি না। আমাদের লক্ষ্য ছিল বাঙালি জাতীয়তাবাদের ভিত্তিতে পূর্ববঙ্গের স্বাধীনতা। কাজেই আমাদের কাছে তখন একটাই পথ মুজিবকে বিশ্বাস না করেও তাঁকে সামনে রেখেই আমাদের এগোতে হবে।’ (পৃঃ ১১৮)

১৯৭০ সালের নির্বাচন ঘনিয়ে আসলে মুজিবের সাথে আসন নিয়ে গণমুক্তি দলের দরকষাকষি চলে। কালিদাস বাবু তার বইয়ে লিখেছেন, ‘পূর্ববঙ্গে লোকসংখ্যা অনুপাতে জাতীয় পরিষদে ৩৬ জন এবং প্রদেশিক পরিষদে ৭২ জন হিন্দু সদস্য হওয়ার কথা। সেখানে আমরা মাত্র ৫জন গণমুক্তি দলের কর্মীকে জাতীয় পরিষদে এবং অন্য ৫ জন কর্মীকে প্রাদেশিক পরিষদের আওয়ামি লিগের প্রার্থী হিসাবে নমিনেশন দিতে অনুরোধ করি।… মুজিব তাতে রাজি হলেন না। শেষ পর্যন্ত ৩ জনকে জাতীয় পরিষদে এবং ৩ জনকে প্রাদেশিক পরিষদে মনোনয়ন দিতেও তিনি রাজি হলেন না। কারণ তখন সমগ্র পূর্ববঙ্গে ভোটের হাওয়া আওয়ামি লিগের অনুকুলে। যাই হোক, শেষ পর্যন্ত দলের পক্ষে ৫ জনকে জাতীয় পরিষদে এবং ৩ জনকে প্রাদেশিক পরিষদে নমিনেশন দেওয়া হয়। এরা সকলেই দলের মোমবাতি প্রতীকে লড়ে এবং অল্প ভোটে হেরে যায়’।

‘মনে অন্য চিন্তা থাকলেও মুজিবকে বলেছিলাম যে দলের কর্মীরা স্বাধীন পূর্ববঙ্গ সম্বন্ধে কিছুই জানে না। মুজিব অবশ্য নির্বাচনে আওয়ামি লিগের হাওয়া বুঝতে পেরেছিলেন। তাই জাতীয় পরিষদে মাত্র ১ জন এবং প্রাদেশিক পরিষদে মাত্র ৬ জন হিন্দুকে আওয়ামি লিগের নমিনেশন দিয়েছিলেন। কেননা হিন্দুদের রাজনৈতিক ও মানসিকতার কথা সব মুসলমানই জানে। তারা সকলেই জয়লাভ করেছিলেন। সেদিন মুজিবের মনোভাব বুঝতে আমাদের অসুবিধা হয়নি। তাঁর হিন্দু প্রীতির প্রমাণ সেদিন তিনি নিজেই দিলেন। এসব সত্তেও… হিন্দুদের বৃহত্তর স্বার্থে মুজিবকে সমর্থন করা ছাড়া উপায় ছিল না।’
যুদ্ধের পূর্বাপার

বইটির ১২৬-১২৭ পৃষ্ঠায় কালিদাস বাবু লিখেছেন, ‘‘নির্বাচনের পরেই মুজিব পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হবার জন্য ব্যস্ত হয়ে পড়েন। সেই সময় দেখা করতে চাইলে তিনি ব্যস্ততার অজুহাতে আমাকে এড়িয়ে যেতে থাকেন। অনেক চেষ্টার পরও তাঁর সঙ্গে একান্তে আলোচনার সযোগ পাওয়া মুশকিল হয়ে পড়ল। …মুজিবের আচরণ থেকে আমার মনে সন্দেহ হয় যে, পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হওয়াকেই তিনি বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন। মনে প্রশ্ন জাগল মুজিব কি তবে স্বাধীন পূর্ববাংলার কথা বাদ দিয়ে পাকিস্তানকে অটুট রেখে তার প্রধানমন্ত্রী হওয়ার কথা চিন্তা করতে শুরু করেছেন? …মুজিব পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হলে বাঙালি জাতীয়তাবাদের ঝড় কি বইতে থাকবে? পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হলে তাঁর হাতে এমন কি বিশেষ শক্তি আসবে যার দ্বারা পূর্ববাংলাকে স্বাধীন করার কাজ সহজতর হবে?…সব ভাবনার একই জবাব পেয়েছি। তা হল মুজিব পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হলে বাঙালি জাতীয়তাবাদের আবেগ মুথ থুবড়ে পড়বে। ঝড় আচমকা থেকে যাবে”।

১৯৭১ সালের ৭ই মার্চ রেডকোর্সের জনসভা প্রসঙ্গে বাবু কালিদাস বৈদ্য লেখেন, “ বাড়িতে বসেই তিনি খবর পান যে, সেখানে স্বাধীনতা ঘোষণার পরিবেশ ও পরিস্থিতি সম্পূর্ণভাবে তৈরি। সেদিন স্বাধীনতা ঘোষণা না করলে যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া অবশ্যম্ভাবী সেটা বুঝতে তাঁর বাকি থাকল না। কাজেই পরিস্থিতি তাঁকে ভীষণ এক চাপের মুখে ঠেলে দিল। তিনি বিশেষ একটি খবরের অপেক্ষায় ছিলেন এবং খবরটি পেতে দেরি হচ্ছিল। খবরটি তার কাছে ছিল খুব গুরুত্বপূর্ণ। সভায় যাত্রা করার নির্দিষ্ট সময়ের কিছু পরে সেই খবরটিও তিনি পেয়ে যান। এই বিশেষ খবরটি কি তা আমার জানা থাকলেও এখন তা বলা সম্ভব নয়। এই বিশেষ কারণটি ছিল বাস্তব, অন্যগুলি অনুমান” (পৃষ্ঠা-১২৯)।

শেখ মুজিবুর রহমানের উদ্দেশ্য বর্ণনা করতে গিয়ে কালিদাস বৈদ্য লেখেন,
“বুঝতে অসুবিধা হয় না যে, এত দিন মুজিব ৬ দফা দাবি করে ও স্বাধীন বাংলাদেশের বিরোধিতা না করে যে জনসমর্থন ও জাগরণ গড়ে তুলেছিলেন তার একমাত্র উদ্দেশ্য ছিল পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হওয়া প্রধানমন্ত্রী হয়ে ব্যক্তিগত উচ্চাকাঙ্খা পূরণ করা। স্বাধীন বাংলাদেশ গড়া নয়। তার মাথায় পূর্বের চিন্তা স্বাধীনতা থাকলেও নির্বাচনের পরে পাকিস্তানকে অটুট রেখে তিনি তার প্রধানমন্ত্রী হওয়ার স্বপ্ন নতুন করে দেখতে শুরু করেছিলেন। তিনি খুব ভালো করে বুঝছিলেন যে, বর্তমান আওয়ামী লীগের কোনো নেতাই তাঁর মতো নিজ হাতে পাকিস্তান গড়েনি বা পাকিস্তান গড়ার জন্য জেহাদে অংশগ্রহণ করেনি। তাই পাকিস্তানের প্রতি যে প্রাণের টান তাঁর মধ্যে আছে, তাদের মধ্যে তা থাকতে পারে না। তাই তাদের পক্ষে পাকিস্তান তথা ইসলামি জাতীয়তাবাদকে পরিত্যাগ করে বাঙালি জাতীয়তাবাদে গা ভাসিয়ে দেওয়া খুবই সহজ। তাই অখণ্ড পাকিস্তানের অস্তিত্ব মূল্যবান নয় তাদের কাছে। কিন্তু মুজিব তা করেত পারেন না। পাকিস্তান সৃষ্টির এক নেতা মুস্তাক আহম্মদের সঙ্গে তিনি লড়কে লেঙ্গে পাকিস্তান বলে আন্দোলন করেছেন। পাকিস্তান আদায় করেছেন। সেই সব স্মৃতি আজও তাঁর মনে দৃঢ়মূল ভাবে জড়িয়ে রয়েছে। তাকে কিভাবে তিনি পরিত্যাগ করবেন” (পৃষ্ঠা-১৩৩)।

কালিদাস বৈদ্য পাকিস্তান ভেঙ্গে দিয়ে স্বাধীনতা সংগ্রাম পরিচালনা করার জন্য শেখ মুজিবুর রহমানের সাথে কথা বলেছেন। তিনি লিখেছেন, “অবস্থা দ্রুতগতিতে এগিয়ে যাচ্ছে। ইতিমধ্যে চিত্ততবাবুর কাছ থেকে নির্দেশ এল এবং আমি মুজিবের সঙ্গে আলোচনায় বসলাম। স্বাভাবিক ভাবেই, আলোচনার বিষয়বস্তু ছিল, বর্তমান পরিস্থিতিতে আমাদের কি করা উচিত। তাঁর কথাবার্তার মধ্য দিয়ে পরিষ্কার বোঝা গেল যে, বাংলাদেশকে স্বাধীন করার চেয়ে অখণ্ড পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হওয়াকেই তিনি বেশি গুরুত্ব দিলেন। এই সময় আমি তাঁর আত্মগোপনের কথা তুললাম। চিত্তবাবু আমাকে আগেই বলেছিলেন যে, তাঁর আত্মগোপনের ব্যবস্থা তিনি ইতিমোধ্য করে ফেলেছেন। আমি মুজিবকে বললাম, “দেশের পরিস্থিতি যে দিকে এগিয়ে যাচ্ছে তাতে শীগ্রই আপনার আত্মগোপন করা উচিত।” তাঁর আত্মগোপনের জন্য তিনটি পথের কথা আমরা আলোচনা করেছিলাম যার মধ্যে প্রথম ও প্রধান পথ ছিল ভারতে পালিয়ে যাওয়া।

তাই আমি তাঁকে বললাম, “বাংলাদেশে আত্মগোপন করে থাকা আপনার পক্ষে সম্ভব নয়, কারণ এখানকার সব লোকই হয় আপনাকে দেখেছে নয়তো আপনার ছবি দেখেছে। তাই সব থেকে ভালো হয় যদি আপনি ভারতে চলে যান।” ইতিমোধ্য চিত্তবাবু যে নিরাপদে তাঁর আত্মগোপন করে থাকার সমস্ত ব্যবস্থা করে এসেছেন তাও তাঁকে বললাম। আমি আরও বললাম যে, ইচ্ছা করলে তিনি তাঁর সঙ্গীসাথিদের নিয়েও ভারতে যেতে পারেন এবং সেখানে সকলেরই থাকা খাওয়ার সুবন্দোবস্ত করা হবে। তাকে আমি আরও বলেছিলাম যে ভারতে গিয়ে রাষ্ট্রপ্রধানের মর্যাদা পাবেন ও সমস্ত সুযোগ তার থাকবে। সব শুনে তিনি হুঙ্কার দিয়ে উঠলেন। বললেন,
“কবিরাজ (ডা. বৈদ্যকে তিনি এই নামে ডাকতেন), ভারতের মাটিতে থেকে আমি স্বাধীনতা সংগ্রাম চালাব না।”
আমিও প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই তাঁকে বললাম, “দেশে থেকে স্বাধীনতা সংগ্রাম চালাতে পারলেই সব থেকে ভালো হয়। কিন্তু তা বড়ই কঠিন কাজ।” দ্বিতীয়টি তার নিজস্ব নির্ধারিত পথ। তা তিনিই বেছে নিবেন”। (পৃষ্ঠা-১৩৪-১৩৫)

শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতার ঘোষণা দেন নাই দাবি করে বাবু কালিদাস বৈদ্য তাঁর বইয়ে লিখেছেন, “পরে কলকাতায় এসে জানতে পারি মুজিবের বাড়িতে সে সময় অনেক আওয়ামি লিগ নেতা ও ছাত্রনেতা ছিলেন। তারা সবাই মুজিবের বাড়ি থেকে বেড়িয়ে আণ্ডার গ্রাউণ্ডে যেতে পারলেন ও নিরাপদে সবাই ভারতে আসতে পারলেন। কিন্তু মুজিব তা পারলেন না কেন? ই পি আর ও পলিশ হেডকোয়ার্টার আক্রমণ শেলিং এর প্রথম শব্দের প্রায় ১ ঘন্টা পরে মিলিটারী মুজিবের বাড়িতে যায় ও তাকে গ্রেপ্তার করে। ১ ঘন্টা সময় পেয়েও তিনি আণ্ডার গ্রাউণ্ডে গেলেন না আর স্বাধীনতা ঘোষণার সই করা কাগজও কাউকে দিলেন না কেন? মিলিটারী নামবে খবর জেনেও তিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা পত্রে স্বাক্ষর করে আওয়ামি লিগ নেতাদের হাতে তা আগে দিলেন না কেন? এসব প্রশ্নের জবাব খুঁজলেই সঠিক সত্য বেরিয়ে আসবে এবং যা সবাই জানে। সেদিন ভারতে আসা আওয়ামি লিগ নেতাদের কাছে মুজিবের স্বাধীনতা ঘোষণার কোনো কাগজপত্র ছিল না। তাদের একমাত্র সম্বল ছিল- বাঙালি যুবকদের স্বতঃস্ফূর্ত স্বাধীনতা ঘোষণা।

ইয়াহিয়া ও ভুট্টোর সঙ্গে গোপন বোঝাপড়ার কথা মুজিব কাউকে বলেননি। সেই চরম মুহূর্তে তিনি স্বাধীন বাংলাদেশ ঘোষণাও করলেন না। কেননা মুজিব, ইয়াহিয়া ও ভুট্টোর পরিকল্পনা ছিল মাতৃগর্ভে “বাংলাদেশ” শিশুটিকে হত্যা করা আর মুজিবের মনেও দৃঢ় বিশ্বাস ছিল যে তার ঘোষণা ও নেতৃত্ব ছাড়া বাংলাদেশ কোনদিনই স্বাধীন হতে পারবে না।

বহুদিনে বহু ঘটনার সত্যতা প্রমাণের ভিত্তিতে রচিত হয় একটি প্রবাদ। রাখে হরি মারে কে? ধর্মের কল বাতাসে নড়ে।” এগুলি একই জাতীয় বাংলা প্রবাদ। এগুলির সত্যতা প্রামাণের জন্যই মুজিবের গ্রেপ্তারের খবর পেয়ে বাঙালি সুলভ আবেগ ও সেনাসুলভ সাহসে জ্বলে ওঠে মেজর জিয়াউরের মন। চট্টগ্রাম বেতার কেন্দ্র থেকে বাংলাদেশ শিশুটির জীবিত অবস্থায় জন্মের ঘোষণা মুজিবের নামে তিনি দিলেন।…এভাবেই তিনি মুজিবের নামে স্বাধীন বাংলাদেশের ঘোষণা দিলেন সেই চরম মুহূর্তে। সেই আবেদনে সাড়া দিতে ও শিশুটিকে বাঁচাতে রক্ত শপথ নিয়ে বাঙালি রুখে দাঁড়াল দিকে দিকে। শুরু হল স্বাধীনতা সংগ্রাম আর ভারতের সাহায্যে শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশ স্বাধীন হল।’’ (পৃষ্ঠা-১৩৯,১৪০)

অস্থায়ী সরকার গঠন
যুদ্ধ শুরুর প্রেক্ষাপটের বর্ণনা দিতে গিয়ে কালিদাস বৈদ্য লিখেন; ‘‘সময়মতো জিয়াউরের ঘোষণা পাক আর্মির প্রাথমিক তাণ্ডব ও বাঙালি যুবকদের যুদ্ধ ঝাঁপিয়ে পড়ার সাহস ও আবেগ দেখে তাজুদ্দিন, নজরুল ইসলাম সহ আওয়ামি লিগ নেতারা ও বিশেষ বিশেষ ছাত্র নেতারা সাহায্যের জন্য ভারতে ছুটে আসে। তার জন্য চিত্তবাবু আগে ক্ষেত্র প্রস্তুত করে রেখেছিলেন। আওয়ামী লীগ নেতারা দিল্লীতে পৌঁছে সেই আবেগী স্বভাবকে সাহায্য ও মদত পাওয়ার আশ্বাসে অস্থায়ী বাংরাদেশ সরকার ঘোষণা করে ১২ই এপ্রিল আর শপথ নেয় ১৭ই এপ্রিল’৭১।

সেদিন ইসলামিক জাতীয়তাবাদের কথা ভুলে আবেগে সাময়িকভাবে বাঙালি জাতীয়তাবাদকে ভিত্তি করেই ছাত্র যুবকদের দল স্বাধীনতা ঘোষণা করেছিল। তখন ছাত্রজনতার চাপে জিয়াউর রহমান শেখ মুজিবের নামে স্বাধীনতা ঘোষনার খবরটি প্রচার করেছিলেন। ঠিক সেই একই আবেগ নিয়ে বাংলাদেশ সরকার ঘোষিত হল। সেদিন জিয়াউর যেমন মুজিবের নাটকের শেষ অঙ্ক দেখেননি বা জানতে পারেননি তেমন প্রায় সব নেতাসহ তাজুদ্দিনও সে নাটকের শেষ অঙ্কের কথা জানতে পারেননি। আর ভারত সরকার সব বুঝতে পেরেও হয়তো সব না বোঝার ভান করেছে। কেননা তা জানার কথা বলতে গেলেই তাতে সমস্যা বাড়বে। তাতে বাংলাদেশের স্বাধীনতা বানচাল হতে পারে। তখন ছুঁচো গেলার মতো অবস্থা ভারতের”। (পৃষ্ঠা-১৪০,১৪১)
শালীনতার সকল সীমা লংঘন করে এদেশের জন মানুষের খুব কাছের নেতা শেখ মুজিবুর রহমানকে অস্রাব্য ভাষায় তিরষ্কার করে কালিদাস বাবু তার বইয়ে লিখেছেন,

“ বিবাহ বন্ধন ছেদ করে কোনো নারী বাড়ির বাইরে গেলে তার দুর্বলতার কারণে অনেক পুরুষ তার ইচ্ছায় ও অনেক সময় অনিচ্ছায় তাকে ভোগ করার সুযোগ নেয়। তার গর্ভে সন্তান এলে সেই অবৈধ সন্তানের পিতৃত্বের দাবি নিয়ে কেউ এগিয়ে আসে না। কারণ নারীটি তো অনেকের সাহচর্যে এসেছে। কাজেই তার খাঁটি পিতার পরিচয়ের কথা কেউই বলতে পারে না। তবে একজন বিশেষ পুরুষ ও উক্ত নারী একই রাতে স্বপ্ন দেখে যে উক্ত শিশুটির জন্মের পরে তার প্রকৃত পিতার মৃত্যু সমূহ সম্ভাবনা আছে, নারীটিও চিরপঙ্গু হয়ে যাবে, তবে শিশুটি মৃত অবস্থায় জন্ম নিলে বা জন্মের পরেই তার মৃত্যু হলে সে আশঙ্কা থাকবে না। তারপর নিশ্চয়ই উক্ত পুরুষ নারীর গর্ভপাত ঘটিয়ে শিশুটির মৃত্যু কামনা করবে। তাতে নারীটিও চির পঙ্গত্ব থেকে রক্ষা পাবে। পুরুষটির জীবনও রক্ষা পাবে। আর সুস্থ শরীরে নারীটিকে পুরুষটি ইচ্ছামতো ভোগ করতে পারবে। উভয়ের এ সিদ্ধান্তের পরে যদি সমাজ উক্ত পুরুষটিকে সেই অবৈধ সন্তানের পিতা হওয়ার জন্যই পুরুষটির উপর চাপ সৃষ্টি করে তবে পুরুষটি কিছুতেই রাজি হতে পারে না। মুজিব সেই পুরুষটির ভূমিকাই পালন করলেন। ছাত্রজনতা চাপ দিতে থাকল। সেই চাপের কাছে মুজিব তখন নত হলেন না বরং ভাবী বাংলাদেশ শিশুটিতে হত্যার ভার ইয়াহিয়ার উপর ছেড়ে দিয়ে নিজের জীবন বাঁচাতে ও নিরাপদে সময় কাটাতে চলে যান ইসলামাবাদে”। (পৃষ্ঠা ১৪২-১৪৩)

“সংগ্রাম শুরু হল কলকাতায়” এই শিরোনামে লিখতে গিয়ে বাবু কালিদাস বৈদ্য তার বইয়ে লিখেছেন, “…আমরা কলকাতায় পৌছাই খুব সম্ভব ১৩ই এপ্রিল ৭১। আমাদের কলকাতা পৌছাবার আগেই ১২ই এপ্রিল বাংলাদেশে সরকার ঘোষিত হয় আর ১৭ই এপ্রিল মন্ত্রীরা শপথ নেন। আগেই বলা হয়েছে সে সরকারের প্রধানমন্ত্রী হন তাজুদ্দিন আহম্মদ। সেই সরকার ঘোষিত হওয়ার পূর্বে তিনি চিত্তবাবু ও ছাত্রনেতাদের সঙ্গে প্রাথমিক কোনো আলোচনা করেননি। চিত্তবাবু ছিলেন মুজিবের স্বীকৃত নিজস্ব প্রতিনিধি। স্বাধীনতার প্রাথমিক প্রস্তুতি নিতেই কলকাতা আসেন তিনি। আর ছাত্রদের মধ্যে যে ৪ জন নেতার একান্ত প্রচেষ্টায় মুজিবের আন্দোলন তুঙ্গে ওঠে তারা কেউই এই সরকার গঠনের প্রাক্কালে কিছুই জানতে পারল না। …ছাত্রনেতারা প্রথমদিকে ভীষণভাবে চটে যায়। তারা প্রকাশ্যভাবে তাজুদ্দিনের বিরদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করার কথা চিন্তা করতে থাকে। আর চিত্তবাবু মনে মনে দুঃখ পেলেও তা হজম করেন বৃহত্তর স্বার্থের দিকে তাকিয়ে।

… তাই তিনি নিজে ও ভারতের ভারপ্রাপ্ত একজন অফিসার মিলে বুঝিয়ে সুঝিয়ে ছাত্রনেতাদের নিবৃত্ত করেন।…… আমার সেদিন মনে হয়েছিল যে ভারত সরকার সেদিন বুঝেছিল মুজিব স্বেচ্ছায় গ্রেপ্তার বরণ করেছেন। তাই আগরতলা থেকে বি.এস.এফ প্লেনে উক্ত ৬ জন নেতা দিল্লীতে পৌছানোর সঙ্গে সঙ্গে ভারত সরকার তাদেরকে দিয়ে তাড়াতাড়ি স্বাধীন বাংলাদেশ সরকার গঠনের সিদ্ধান্ত নেয়। সেভাবে সরকার গঠিত ও ঘোষিত হয় ১২ই এপ্রিল ৭১। মুজিব নিজে বিশ্বাসভঙ্গ করেছিল জেনেই তার বিশ্বস্ত প্রতিনিধি চিত্তবাবু ও ৪ জন ছাত্রনেতা কেন, কারো সাথে আলোচনার জন্য সময় ও সুযোগ ভারত সরকার এই মন্ত্রীদের দেয়নি। তখন ভারত সরকারের সামনে প্রথম ও প্রধান কাজ ছিল বাংলাদেশ সরকার গঠন ও ঘোষণা”। (পৃষ্ঠা ১৪৯-১৫০)

উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন ‘অসাম্প্রদায়িক’ বাহিনী গঠন
স্বাধীনতা সংগ্রামে মুক্তিবাহিনীতে যারা যোগ দিয়েছিল তাদের প্রতি কালিদাস বাবু ও চিত্তরঞ্জন ছুতারদের আস্থা ছিল কম, তাই তাদের প্রতিপক্ষের “মুজিব বাহিনী” নামে একটি বাহিনী গঠণ করেছিল তারা। এ প্রসঙ্গে বাবু কালিদাস বাবু তার বইয়ে লিখেছেন, “ চিত্তবাবু ও আমি এক গোপন আলোচনায় বসি। সেই ভয়াবহ পরিস্থিতিকে কিভাবে মোকাবিলা করা যায় সেই পথের অনুসন্ধানই ছিল আমাদের মূল আলোচ্য বিষয়। সেদিনের আলোচনায় দুটি পথের কথা আমরা চিন্তা করি। তার প্রথমটি হলো হিন্দু ছেলেদের আলাদাভাবে গোপনে ট্রেনিং এর ব্যবস্থা করা। আর দ্বিতীয়টি হলো মুক্তি বাহিনী ছাড়াও আরও একটি উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন বাহিনী গঠন করা। তারা একদিকে যেমন উন্নত ধরনের সামরিক শিক্ষা পাবে তেমনি অন্যদিকে অসাম্প্রদায়িক হওয়ার জন্য তাদের বাস্তব শিক্ষা দিতে হবে। এই অসাম্প্রদায়িক বাহিনী বাংলাদেশের প্রকৃত সামরিক ক্ষমতা তাদের হাতে নেবে। বাংলাদেশকে তারাই চালাবে সাম্প্রদায়িক মুক্তিযোদ্ধাদের শক্তি খর্ব করে। তাদের হাতে সমস্ত ক্ষমতা যাতে যায় প্রথম থেকেই সেরকম ব্যবস্থা নিতে হবে। তার ফলে সেখানে অসাম্প্রদায়িক পরিবেশ থাকবে।

বৈঠকের শেষের দিকে চিত্তবাবু প্রস্তাব করেন, এই বাহিনীর নাম হবে মুজিব বাহিনী। সঙ্গে সঙ্গে আমি তার স্বীকৃতি জানাই। ওদিন আরও আলোচনা হয় সেই মুজিব বাহিনীর নেতৃত্ব ও কর্তৃত্ব থাকবে ৪ জন ছাত্রনেতার হাতে। ওদিন আমরা বিশেষভাবে আলোচনা করি যে প্রথমে সিরাজুল আলমের সম্মতি পেলেই প্রস্তাবটির পক্ষে ৪ ছাত্রনেতার সমর্থন পাওয়া সহজ হবে। কেননা শেখ মণি তার মামার নামের বাহিনীর বিরোধিতা কখনই করবেন না। মণি ও সিরাজুল একমত হলে রেজ্জাক ও তোফায়েল কোনো বিরোধিতা করবে না। এই প্রস্তাবে সম্মতি আদায় করার দায়িত্ব চিত্তবাবু নিজেই নিলেন।…চিত্তবাবুও একটু ঘোরা পথে আলাদাভাবে তাদের প্রত্যেককে জানিয়ে দেন যে ব্যবস্থাটি তাদের পক্ষে একটি আশীর্বাদ ছাড়া আর কিছুই না। শেষের দিকে চিত্তবাবুর পরোক্ষ নির্দেশ মতো সিরাজুল আলম খানের প্রস্তাবে সবাই সম্মতি জানায়।

এই প্রস্তাবটি গ্রহণের পরে ছাত্রনেতারা মনে করল ভারত সরকার প্রস্তাবটির অনুমোদন দিলেও সেভাবে কাজ করলে বাংলাদেশ সরকার তাদের মতের বাইরে কখনও যেতে পারবে না। আর আমাদের চিন্তা থাকল- দুই বাহিনীর অর্থাৎ মুজিব বাহিনী ও মুক্তিবাহিনীর মধ্যে রেষারেষি চলতে থাকবে। সঙ্গে বাংলাদেশ সরকারের সাথেও মতানৈক্য চলবে। হিন্দুবাহিনী গঠন করতে পারলে তারা হবে মধ্যশক্তি। তাদের কথা তখন শেষকথা।

সিরাজুল আলমের কথামত তারা চিত্তবাবুকে জানিয়ে দেয় যে এই ট্রেনিং এর কথা সম্পূর্ণ গোপন রাখতে হবে।…এই প্রস্তাবটি পরের দিনই বিশেষ নির্ভরযোগ্য ব্যক্তির মাধ্যমে অতি গোপনে প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর কাছে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। তিনিও সঙ্গে সঙ্গে তার অনুমোদন দেন। তারপরেই জেনারেল উবানের অধীনে তাড়াতাড়ি মুজিব বাহিনীর গোপন ট্রেনিং শুরু হয়। খুব সম্ভব মে মাসের মাঝামাঝি সে ট্রেনিং শুরু হয়।

ট্রেনিংপ্রাপ্ত মুজিব বাহিনীর সেনারা দলে দলে বাংলাদেশে গোপনে ঢুকতে থাকলেও একটি বিশেষ দলকে বিশেষ কারণে কলকাতায় রেখে দেওয়া হয়। এ ভাবে বাংলাদেশের ভেতরে গোপনে ঢোকার সময় একটি দল হঠাৎ সজাগ বি.এস.এফ-এর নজরে পড়ে। বি.এস.এফ.-এর জোয়ানরা তাদের চ্যালেঞ্জ করে। তখন বাধ্য হয়ে মুজিব বাহিনীর সেনারা সারেন্ডার করে। পরে একটি বিশেষ ফোন পেয়ে বি.এস.এফ-এর জোয়ানরা তাদের বাংলাদেশের ভিতরে ঢুকতে সাহায্য করে সত্য কিন্তু ইতিমধ্যে ব্যাপারটি জানাজানি হয়ে যায়। তাতে বাংলাদেশ সরকার ও তার প্রধান সেনাপতি ভীষণ চটে যান। চটে যান ভারতের পূর্বাঞ্চলের সেনা প্রধান জেনারেল আরোরাও। তারা মুজিব বাহিনীর প্রতি কঠোর ব্যবস্থা নিতে গিয়ে প্রত্যেকেই বুঝতে পারলেন যে মুজিব বাহিনীর খুঁটি বড় শক্ত। তা জেনে তারা প্রত্যেকেই সেই সেনাদের ক্ষমতা অটুট রেখেই মুজিব বাহিনীর সঙ্গে সমঝোতায় আসতে বাধ্য হন”। (পৃষ্ঠা ১৫৮,১৫৯,১৬০)

ভারতে হিন্দু ছেলেদের আলাদা ট্রেনিং প্রসঙ্গে বাবু কালিদাস বৈদ্য লিখেছেন, “ ভারত সরকার ভালোভাবে বুঝতে পারে যে বাংলাদেশে হিন্দুদের ভবিষ্যৎ আরও করুণ হবে। তা বিশেষ করে বুঝতে পারেন ভারত সরকারের সেই বিদেশ সচিব নাথবাবু। তারাই একান্ত প্রচেষ্টায় হিন্দু ছেলেদের আলাদাভাবে গোপন ট্রেনিং এর ব্যবস্থা হয়। সে ব্যবস্থামত সপ্তাহে ৬০০ জন ছেলে ট্রেনিং নিতে যাওয়া শুরু করে। এভাবে ২৫,০০ পঁচিশ শত জন যাওয়ার পরে তাদের পূর্ণ ট্রেনিং পাওয়ার আগে ভারত পাক যুদ্ধ শুরু হয় আর ট্রেনিংও বন্ধ হয়ে যায়। তবে সময় প্রায় আগত।

ট্রেনিং এর প্রস্তাবটি অনুমোদনের সঙ্গে সঙ্গে এ বাহিনীকে আমি গণমুক্তি বাহিনী নামে দিই।
যেহেতু একটি গোপন বাহিনী সেহেতু নামও গোপন থাকলো। এখানে উল্লেখ করার বিশেষ প্রয়োজন আছে যে চিত্তবাবু আড়াল থেকে মুজিব বাহিনী চালানোর দায়িত্ব নেন। আমার উপর দায়িত্ব পড়ে সেই গণমুক্তি বাহিনীকে আড়াল থেকে চালান। তবে মুজিব বাহিনী শেষ পর্যন্ত গোপনীয়তা ত্যাগ করে সদরে আসল কিন্তু গণমুক্তি বাহিনী সদরে আসার সুযোগ আর পেল না। কুম্ভকর্ণের ঘুমের মত সে ঘুমিয়ে পড়ল। সে ঘুম কবে ভাঙবে তা কেউ জানে না”। (পৃষ্ঠা ১৬৩,১৬৪)

অস্থায়ী সরকারে ভিন্ন ধারা

১৯৭১ সালে পাক ভারত যুদ্ধের প্রস্তুতি প্রসঙ্গে ডাঃ কালিদাস বাবু লিখেছেন,- “ বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণার পরেই ভারত সরকার যুদ্ধের প্রস্তুতি নিতে শুরু করে। তার জন্য সবদিকে তীক্ষ্ণ নজর রেখেই সে প্রস্তুতি চালাতে থাকে। ভারত সরকার ভালোভাবেই জানত, বাঙালি সুলভ সাময়িক আবেগের ফলে স্বাধীন বাংলাদেশ ঘোষিত হয়েছে। ইসলামি মানসিকতা তারা সহজে ভুলতে পারে না। স্বাধীন বাংলাদেশের ঘোষণা না করে মুজিবের অযৌক্তিক গ্রেফতার বরণ ভারত সরকারকে ভাবিয়ে তুলেছিল। তারা গোয়েন্দা মারফত জানতে পারে যে পর্দার আড়ালে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ও অখন্ড পাকিস্তানের পক্ষে ষড়যন্ত্র ভারতে মাটিতে শুরু হয়েছে। তাতে প্রধান ভূমিকা নিয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রী মোস্তাক আহমেত ও তার সচিব মহবুল হক চাষী। আই. এস. আই. এর মাধ্যমে মুজিবের সঙ্গেও নাকি তাদের যোগাযোগ হয়েছে। মুজিবের সঙ্গে পাকিস্তানের বোঝাপড়ার খবর মুস্তাক বিশেষ বিশেষ নেতার কাছে জানায়। ফলে বেশ কিছু সংখ্যক নেতা মুস্তাকের পক্ষে এসে যায়। এমনকি বাংলাদেশের সেনাপতি কর্ণেল ওসমানিও সে দলে নাম লেখায়।

এসব খবর গোয়েন্দা মারফত পেয়েও ভারত তাদের বিরুদ্ধে কোনো কড়া ব্যাবস্থা নেয়নি। কিন্ত পরে বাংলাদেশের স্বীকৃতির বক্তব্য জাতিসংঘে বলতে বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের প্রতিনিধি হিসাবে মোস্তাকের নাম বাংলাদেশে সরকার ঘোষণা করার পরে ভারত সরকার তার পাশপোর্ট দেয়নি। তার জন্য তিনি সে দলের প্রধান তো দূরের কথা সাধারণ প্রতিনিধি হয়েও যেতে পারলেন না। ভারতের আশঙ্কা ছিল তিনি জাতিসংঘে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ও অখন্ড পাকিস্তানের পক্ষে বক্তব্য রেখে পাকিস্তানে চলে যাবেন। ভারত আর ফিরবেন না। তাই শেষ মুহুর্তে লন্ডনের বাংলাদেশের অস্থায়ী হাই কমিশনার আবু সইদ চৌধুরী বাংলাদেশ ডেলিগেট টিমের প্রধান হন ও বক্তব্য রাখেন। আর লেঃ জেঃ নিয়াজীর অস্ত্র সহ আত্মসমর্পণ কালে বাংলাদেশ সেনা বাহিনীর নেতৃত্ব দেন কাদের সিদ্দিকী। কিন্তু বাংলাদেশের প্রধান সেনাপতি কর্ণেল ওসমানিকে ভারতে সে সুযোগ দেয়নি।

১৯৭১ সালের অক্টোবরের দিকে পূর্ববঙ্গে সর্বত্র শান্তভাব ফিরে এল। সামরিক বাহিনীর হিংস্র রূপের পরিবর্তন ঘটল। কোর্ট কাছারি, অফিস আদালত হাট বাজার স্বাভাবিক ভাবে চলতে শুরু করল। পূর্ব পাকিস্তানের ভিতরে কোথাও কোনো উত্তেজনা নেই। সেখানের জীবনধারা সাধারণভাবেই চলতে শুরু করেন। মুক্তি ফৌজের কোনো নাম গন্ধ সেখানে ছিল না। মুক্তিযুদ্ধের কোনো প্রশ্নই আসে না। সে তখন সম্পূর্ণ শান্ত। আর পাকিস্তান সরকার বিদেশী সাংবাদিকদের পূর্ব পাকিস্তানের বাস্তব রূপের দৃশ্য দেখানোর জন্য ও তার প্রচারের জন্য আমন্ত্রণ জানাতে থাকে। ভিতরের শান্ত ভাব দেখেই পাকিস্তান সেনাদের সীমান্তে পাঠাতে থাকল। ভিতরের সেনা একেবারে কমে গেল। তা দেখেই বাঘা সিদ্দিকী মধুপুর জঙ্গলের আশ্রয়স্থল থেকে বেরিয়ে নতুন করে মুক্তিযুদ্ধ শুরু করে। ভারতীয় প্রচার মাধ্যম তা ফলাও করে বিশেষ কারণে প্রচার করে। যাতে বাংলাদেশ সরকার ও তার জনগণের মনোবল অটুট থাকে।

সেই শান্ত পরিবেশ পূর্ববঙ্গে ফিরে এলেই ইয়াহিয়া ও ভুট্টো মুজিবকে বলে যে পূর্ব পাকিস্তানের অবস্থা সম্পূর্ণভাবে শান্ত। মুজিবও চারিদিকের খবর নিয়ে জানতে পারেন যে তাদের কথা সত্য। বিভিন্ন দেশের টি. ভি. দেখে সংবাদপত্র পড়ে ও রেডিও শুনে পূর্ব পাকিস্তানের প্রকৃত অবস্থার খবর তিনি জানতে পেরেছিলেন। কেননা তার বন্দিত্ব ছিল সাজানো এবং এসব দেখাশোনার সম্পূর্ণ সুযোগ তার ছিল। আর ঢাকায় সীমিত প্রচার ছিল যে ছদ্মবেশে তিনি গোপনে ঢাকা গিয়েও সব দেখেছিলেন। জেনারেল ওসমানিও হয়তো তা জানতেন। তাই পূর্ব পাকিস্তানে সেই শান্ত অবস্থা দেখে এবং শুনে মুজিব বুঝেছিলেন যে স্বাধীন বাংলাদেশ হওয়ার কোনো আশঙ্কা আর নেই।

তখন পূর্ব সিদ্ধান্ত মতো ইয়াহিয়া ও ভুট্টো পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার জন্য মুজিবকে অনুরোধ জানান। মুজিবও সেই প্রস্তাবে রাজি হন। আর মুজিবের মতানুসারেই পাকিস্তানের চিফ মার্শাল ল. অ্যাডমিনিষ্ট্রেটর ইয়াহিয়া খান ২৮ শে ডিসেম্বর ১৯৭১, ঢাকায় পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদের অধিবেশন ডাকেন। উক্ত অধিবেশনের আগে মুজিব জাতীয় পরিষদের নেতা নির্বাচিত হবেন ও পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী রূপে শপথ নেবেন। এই কথাই তাকে বলা হয় ২৮ শে ডিসেম্বরের জাতীয় পরিষদের ঢাকার অধিবেশনে মুজিবের যোগদানের সংবাদে পাকিস্তানের গোয়েন্দা শাখার (I.S.I) মাধ্যমে ঢাকা ও কলকাতায় অনেক আগে পৌছে যায়। কলিকাতায় আওয়ামি লিগের জাতীয় পরিষদের সদস্যরা যাতে বেশি সংখ্যক ঢাকায় ফিরে গিয়ে উক্ত অধিবেশনে যোগদান করেন তার জন্য গোপনে ব্যাপক প্রচেষ্টা শুরু হয়। কলিকাতায় বাংলাদেশ বিরোধী ষড়যন্ত্র অনেক আগেই পরারাষ্ট্র মন্ত্রী মুস্তাক আহমেদ ও তার সেক্রেটারি মাহবুল হক চাষীর নেতৃত্বে শুরু হয়েছিল। তা আগেই বলা হয়েছে।(পৃষ্ঠা ১৬৪,১৬৫,১৬৬)

জাতীয় পরিষদের অধিবেশন ঠেকাতে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ শুরু

ভারত সরকারও তার গোয়েন্দা বাহিনীর মারফত সে খবর আগেই জেনেছিল। তার জন্য ঢাকায় পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদের অধিবেশন ডাকার সঙ্গে সঙ্গে ভারত সরকারের ইঙ্গিতে কলকাতায় থাকা মুজিব বাহিনীর ছেলেরা জাতীয় পরিষদের সদস্যদের পাহাড়া দিতে শুরু করে ও রিভলভার দেখিয়ে হুমকি দেয়। ঢাকায় যাবার জন্য যারা চেষ্টা করবে তাদের গুলি করে মারা হবে। কারণ ভারত সরকার ভালোভাবেই বুঝেছিল যে, জাতীয় পরিষদের অধিবেশনে যোগ দেওয়ার আগে মুজিব প্রধানমন্ত্রীর শপথ নেওয়ার পরে পাকিস্তান ভাঙার বা বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার কোনো সম্ভাবনা থাকবে না। ফলে এক কোটি শরনার্থীর বোঝা ভারতকে চিরকাল বহন করতে হবে। ইয়াহিয়া খান, ভুট্টো বুঝেছিলেন ঢাকায় অধিবেশনের সফলতার পরে স্বাধীন বাংলাদেশ হওয়ারও কোনো আশঙ্কা আর থাকবে না। তখন কলকাতার অস্থায়ী বাংলাদেশ সরকারের মন্ত্রীরা একে একে ধীরে ধীরে ক্ষমা চেয়ে পাকিস্তানে ফিরে যাবেন।

সেদিন ইন্দিরা গান্ধীর নেতৃত্বে ভারত সরকার একটি কঠিন ও বলিষ্ঠ পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হয়েছিল। তাই আওয়ামি লিগের জাতীয় পরিষদের প্রতিটি সদস্যকে পাহাড়া দেওয়ার জন্য একদিকে মুজিব বাহিনীকে নিযুক্ত করা হয়েছিল। অন্যদিকে ভারতের স্বর্বস্তরে গোয়েন্দা বিভাগকেও তাদের চলাফেরার প্রতি সতর্কভাবে বিশেষ দৃষ্টি রাখার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। যাতে তারা কেউ ঢাকায় ফিরে যেতে না পারে। তাতেও নিশ্চিত না হয়ে বাস্তবমুখী কর্মসূচী নিতে বাংলাদেশ ও ভারত সরকার ৭ দফার একটি চুক্তিপত্র সই করে।

এই চুক্তি সই করার পরেই শ্রীমতি গান্ধী যুদ্ধের ব্যাপক প্রস্তুতি নেন। ঢাকার জাতীয় পরিষদের অধিবেশনের সফলতাকে বানচাল করতেই ৩ ডিসেম্বর যুদ্ধ শুরু হয়ে গেল। শেখ মণি, আমি, তোফায়েল, রেজ্জাক, সিরাজুল আলম খান সহ আরও অনেকে ১৯৭১ এর ৩রা ডিসেম্বর সন্ধ্যায় চিত্তবাবুর বাড়িতে একটি ঘরে বসে ইন্দিরা গান্ধীর কলকাতার বিগ্রেডের জনসভায় ঐ দিনের বক্তব্য ও অন্যান্য নানা বিষয় নিয়ে আলাপ আলোচনায় যখন ব্যস্ত তখন হঠাৎ অন্য একজন ঘরে ঢুকেই খবর দিল যে, ভারত-পাক যুদ্ধ আরম্ভ হয়ে গিয়েছে। ভারতীয় বাহিনী বাংলাদেশের ভিতর অনেক দূর পৌছে গেছে। তখন তার প্রতিক্রিয়ার সঙ্গে সঙ্গে তোফায়েল চিৎকার করে বলেছিল,

“ভারতের সেনা বাংলাদেশের ভিতর ঢুকবে তা তো আমরা চাইনি। আমরা যুদ্ধ করেই আমাদের দেশ দখল করব। তাতে যতদিন লাগে লাগুক।” একটু পরেই আবার তোফায়েল মন্তব্য করে, ভারতীয় সেনা সহজে আর ভারত ফিরবে না।” আমার দিকে তাকিয়েই একটু অস্বস্তির ভারত দেখিয়ে তোফায়েল আরো বলছিল- “দাদা কি বলেন” আমি কোন কথা না বলে গম্ভীর ভাব দেখিয়ে তাকে বোঝালাম তাতে তার মতো আমিও বিশেষ চিন্তিত। কিন্তু মনে মনে বলেছিলেম হাজার বছর ধরে যুদ্ধ করেও বাংলাদেশ বাহিনী কোনদিনই বাংলাদেশ দখল করতে পারবে না।


ভারত বাংলা চুক্তিমতো উভয় দেশের সেনা নিয়ে যৌথবাহিনী গঠিত হয়। তার নেতৃত্বে থাকেন ভারতের সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল মানেক স। তখন ভারতের সেনাবাহিনীর পূর্বাঞ্চলে কমান্ডিং অফিসার ছিলেন লেঃ জেঃ জে আরোরা। তার নেতৃত্বে ভারতীয় বাহিনী তথা যৌথ বাহিনী উক্ত চুক্তির ভিত্তিতে বাংলাদেশে প্রবেশ করে ৩রা ডিসেম্বর। রক্তক্ষয়ী তুমুল যুদ্ধের পরে ২৮ শে ডিসেম্বরের অনেক আগে ১৬ইং ডিসেম্বর তারা বাংলাদেশ দখল করে। পূর্ব পাকিস্তানের সেনা প্রধান লে. জে. নিয়াজী, লে. জে. আরোরার কাছে অস্ত্র সহ আত্মসমর্পণ করেন”। (পৃষ্ঠা ১৬৬,১৬৭,১৬৮)
স্বাধীনতার পর

পাকিস্তানের অখণ্ডতা ও সংহতি রক্ষার জন্য শেখ মুজিবুর রহমানের শেষ প্রচেষ্টা প্রসঙ্গে কালিদাস বাবু লিখেছেন, “ মুজিবের দৃঢ় বিশ্বাস ছিল যে তিনি ছাড়া কেউ বাংলাদেশ স্বাধীন করতে পারবে না। আর তাজুদ্দিন মুজিবের মনের কথা বুঝতে পারেননি। যে ভাবাবেগে জিয়াউর রহমান স্বাধীন বাংলাদেশ ঘোষণা করেন, সেই ভাবাবেগেই তিনিও মুক্তি সংগ্রাম চালাবার জন ভারতের মদতে বাংলাদেশ সরকার গঠন করেন ও সাফল্যের সঙ্গে মুক্তি সংগ্রাম চালিয়ে যান। শেষ পর্যন্ত ভারতের সাহায্য বাংলাদেশ স্বাধীন হলো। ফলে মুজিবের নিজ হাতে গড়া সেই পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার বাসনা চিরতরে লুপ্ত হয়ে গেল। অধিকন্তু পাকিস্তানের নাম গন্ধও আর বাংলাদেশে থাকলো না। তাতে মুজিব পুত্রশোকের মত দুঃখ পান। ভারত সরকার ও তাজ্জুদ্দিনের বিরুদ্ধে তিনি চটে যান, কিন্তু চটে গেলেও তখন আর কিছু করার ছিল না। স্বাধীন বাংলাদেশকে নাকচ করার ক্ষমতাও তার হাতে ছিল না।

তাই ইয়াহিয়া ও ভুট্টোর সঙ্গে আলোচনা করে ভবিষ্যত কর্মসূচির সিদ্ধান্ত নিয়ে তিনি লন্ডনে যান। সেখানে বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিদের সঙ্গে তিনি আলোচনা করেন ও ভাবী কর্মসূচী নিয়েই দেশে ফেরেন। আনুমানিক হলেও সম্ভাব্য কর্মসূচী নিয়ে একটু আলোচনার প্রয়োজন আছে। কেননা সেই সিদ্ধান্তমতেই মুজিব দেশে ফিরে কাজ করেছেন। কয়েকটা বিষয়ে তারা তিনজনই একমত পোষণ করেছিলেন যে ভারতীয় সেনা বাংলাদেশে থাকবে। তার জন্য মুজিবকে ঢাকার মাটিতে পা দিয়েই ভারতের সেনাদের ভারতে ফিরে যাওয়ার ও ভারতের মাটিতে বন্দি পাক সেনাদের পাকিস্তানে ফেরত পাঠাবার ব্যবস্থা নিতে হবে”। (পৃষ্ঠা ১৭২)

পাকিস্তানি সেনাবাহীনি আত্মসমার্পনের পরে শেখ মুজিবুর রহমান পাকিস্তান থেকে লন্ডন হয়ে ঢাকা আগমন প্রসঙ্গে লিখেছেন, “দিল্লিতে শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধীর সঙ্গে সাক্ষাৎকালে তিনি মুজিবকে ব্রিটিশ বিমান ত্যাগ করে ভারতীয় বিমানে ঢাকা যাওয়ার অনুরোধ জানান। শ্রীমতী গান্ধীর যুক্তি ছিল যেহেতু ব্রিটিশ সরকার তখনো বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয়নি সেহেতু তার বিমানে মুজিবের ঢাকা যাওয়া উচিত হবে না। মুজিব সে প্রস্তাব নাকচ করেন ও ব্রিটিশ বিমানে ঢাকা যান। ঢাকার মাটিতে পা দিয়েই ঘোষণা করলেন যে, বাংলাদেশ পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম মুসলিম দেশ। কিছুদিন পরে তিনি আরও ঘোষণা করেন যে ভারতের সেনা এক মাসের ভিতরেই ভারতের মাটিতে বাংলাদেশ ছেড়ে ফিরে যাবে। এই শেষের ঘোষণার সুরটি ছিল একটু চড়া তা যেন অনেকটা হুকুমের সুর। পাকিস্তানে বসে ইয়াহিয়া ও ভুট্টোর সঙ্গে আলোচনা করে যে সিদ্ধান্ত নিয়ে এসেছিলেন সেই মতোই বিমান বন্দরে নেমে তার ইঙ্গিত দিলেন”। (পৃষ্ঠা-১৭৩)

“স্বাধীন বাংলাদেশের কথা তিনি কোথাও না বললেও অন্যান্য নেতারা ও ছাত্র যুবকের দল স্বাধীন বাংলাদেশের প্রচার চালায় চারিদিকে। …তিনি নাটকের অভিনয় করেছেন। তাজুদ্দিন তার মনের কথা বুঝতে না পেরেই ভারতের সাহায্যে বাংলাদেশকে স্বাধীন করলেন। তাই মুজিবের সব রাগ তাজুদ্দিন ও ভারত সরকারের উপর পড়ল। ভারতের বিরুদ্ধে সরাসরি কিছু করার ক্ষমতা না থাকলেও আকারে ইঙ্গিতে তা তিনি প্রকাশ করেছেন। কিন্তু তাজুদ্দিনকে তিনি রেহাই দিলেন না। পাকিস্তান ভাঙার উপযুক্ত শাস্তি দিতেই কিছুদিন পরে মন্ত্রিসভা থেকে তাজুদ্দিনকে তাড়িয়ে দিলেন।…অথচ পাকিস্তানকে অটুট রাখতে কলকাতায় বসে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে, যে মোস্তাক আহমেদ ষড়যন্ত্র চালান তার কোনো শাস্তির ব্যবস্থা না করে বরং তাকে মুজিব মন্ত্রিসভায় রাখলেন”। (পৃষ্ঠা-১৭৫,১৭৬)

শেখ মুজিবুর রহমান যে একজন স্পষ্টবাদি নেতা ছিলেন এ প্রসঙ্গে তাজুদ্দিনের একটি মন্তব্য কালিদাস বাবু লিখেছেন, যেখানে তাজুদ্দিন বলেন; “…ভারতের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাতেও তিনি মানসিকভাবে চান না। কিভাবে দেশ স্বাধীন হল, ভারত কি ভাবে সাহায্য করেছে তা কোনোদিন আমাকে বা নজরুল ইসলামের কাছে জিজ্ঞাসা করেননি। তা বলতে গেলেও তিনি বিরক্ত ভাবে তাকান। আর হাসতে হাসতে আমাকে একদিন বলেই ফেললেন “তাজুদ্দিন তুমি বাংলাদেশকে ভারতের কাছে বিক্রি করে দিয়ে এসেছ। তোমার ঐ চুক্তি টুক্তি আমি মানব না”। (পৃষ্ঠা-১৮৭)

ইসলামিক জাতীয়তাবাদে বিশ্বাসী শেখ মুজিবুর রহমান
শেখ মুজিবুর রহমান হিন্দু ও ভারতীয় সংস্কৃতির বিরুদ্ধে ছিলেন এবং ইসলামী জেহাদের একজন খাঁটি সেনা ছিলেন-এ প্রসঙ্গে কালিদাস লিখেছেন, “হিন্দু তথা ভারতীয় সংস্কৃতির যে তিনি বিরোধী ছিলেন তার প্রথম প্রমাণ রমনা কালী মন্দিরের ২৬ একর জমির জবর দখল। সেখানে ১২০০ বছরের প্রতিষ্ঠিত পাক আর্মি দ্বারা ধ্বংসপ্রাপ্ত মন্দিরটির পুনর্গঠনের বাধা দেওয়া। পাক আর্মি এই মন্দির ধ্বংস করেছে ইসলামিক জেহাদ ঘোষণা করে।…মুজিবও ইসলামিক জেহাদের কাজটিকে শুধু স্বীকৃতি জানালেন না, পড়ে থাকা মন্দিরের সমস্ত জমিটিও তিনি জবর দখল করে বুঝিয়ে দিয়েছিলেন তিনিও ইসলামিক জেহাদের একজন খাঁটি সেনা। শ্রীগুলজারিলাল নন্দের ঢাকা সফরের পর বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলার আমরা ৪০/৫০ জন হিন্দু নেতা দেল বেঁধে গিয়ে মুজিবের সঙ্গে দেখা করি ও সরকার কর্তৃক জবর দখল করা মায়ের জমি ফেরত দিতে তাকে অনুরোধ করি। তাকে আরো বলি যে হিন্দুরা তাদের নিজ খরচে আবার সেই মন্দিরটি করতে চায়। তাতে সঙ্গে সঙ্গে মুজিব উত্তর দেন যে, ঐ জমি আর ফেরত দেওয়া যাবে না। আর সেখানে মন্দিরও করতে দেওয়া হবে না। তার বদলে তিনি শ্যামপুর শ্মশানের পাশে ১০ কাঠা জমি দেবেন। সেখানে হিন্দুরা মন্দির করতে পারে”। (পৃষ্ঠা ১৯২,১৯৩)

শেখ মুজিবুর রহমান বুঝতে পারেন বাঙালি সংস্কৃতি একটি পূর্ণ সংস্কৃতি নয়-এ প্রসঙ্গে বাবু কালিদাস বৈদ্য লিখেছেন,
“বাংলাদেশের জন্মলগ্নে মুজিব বুঝতে পারেন বা পাকিস্তান তাকে বোঝায় যে বাঙালি সংস্কৃতি একটি পূর্ণ সংস্কৃতি নয়। একটি উপসংস্কৃতি মাত্র। তাও আবার ভারতীয় সংস্কৃতির উপসংস্কৃতি। তাই ভারতীয় উপর নির্ভর করে তাকে চিরদিন চলতে হবে। কালে কালে ভারতীয় সংস্কৃতির সঙ্গে সে মিশে যাবে। তখন আলাদা জাতিসত্তা আর থাকবে না। আলাদা জাতিসত্তা নিয়ে বাংলাদেশকে থাকতে হলে একমাত্র ইসলামিক আন্তর্জাতিক সত্ত্বার আশ্রয় নিতে হবে। তাহলে পাকিস্তানের মতো বাংলাদেশ টিকে থাকতে পারবে।


শুধু পাকিস্তান নয় বিশ্বের ইসলামিক আলমেরা মুজিবকে বুঝায় যে ভারত ভাগ হয়েছে ইসলামিক জাতীয়তাবাদের ভিত্তিতে। এ সীমারেখা ইসলামিক সীমারেখা। এ সীমারেখার পাহারাদার হলো বিশ্বের সমস্ত মুসলিম রাজ্যের ঐক্যবদ্ধ শক্তি। ভারত কেন পৃথিবীর কোনো একক রাজশক্তির সাধ্য নেই কোনো ইসলামিক রাষ্ট্রকে আঘাত করে-তা বাংলাদেশ যতই ছোট রাস্ট্র হোক। তারপরেও যদি ইসলাম বিরোধী দালালেরা বাংলাদেশের ভিতরে বাঙালি জাতীয়তাবাদী প্রচার শক্তিশালী হয় তখন দরকারমতো পাকিস্তান ও বাংলাদেশ একই কাঠামোর মধ্যে এসে ইসলামকে বাঁচাতে হবে। মুজিব ছিলেন ইসলামিক জাতীয়তাবাদে বিশ্বাসী। বাঙালি জাতীয়তাবাদকে হত্যা করতে ইসলামিক জাতীয়বাদকে প্রচারে প্রথম দিক থেকেই মুজিব নজর দিতে থাকেন। তাই সহজে বলা যায় বাংলাদেশে ইসলামের পরিবেশ সৃষ্টি করতে সব রকমের প্রচেষ্টা চালান মুজিব নিজেই”। (পৃষ্ঠা ২০৯,২১০)
*ডা. কালিদাস বৈদ্য ও সাবেক এমপি চিত্তরঞ্জন সুতা’র মিলে ১৯৭১ যুদ্ধের পর ইন্দিরা গান্ধী’র কাছে গিয়ে অনুরোধ করেছিলেন বাংলাদেশকে ভারতের অংশ করে নেয়ার জন্য।মিস গান্ধী তখন বলেছিলেন ‘ইয়ে না মুমকিন হ্যায়’। তাদের বক্তব্য ছিল ‘যদি দ্বিজাতিতত্ত্ব নাই থাকে, তবে সীমান্ত থাকবে কেন?’ এরপরও তাঁরা বাংলাদেশের হিন্দু প্রধান অঞ্চল নিয়ে স্বাধীন বঙ্গভূমি নামে আলাদা রাষ্ট্র করার কাজ চালিয়ে গেছেন। [মাসুদুল হক, “বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে ‘র’ এবং সিআইএ” (পঞ্চম সংস্করন),প্রচিন্তা প্রকাশনী, ২০১১,পৃঃ ১৪০]

‘বাঙালির মুক্তিযুদ্ধে অন্তরালের শেখ মুজিব বইটির ই-বুক’
 
মেজর ডালিম, Major Dalim FanPage
22 January 2016 ·

Indian Blue print and Mujibnagar Government
ভারতীয় নীল নকশা এবংমুজিব নগর সরকার

--মেজর ডালিম
আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীন ক্ষমতার লড়াই এর পূর্ণ সুযোগ গ্রহণ করে ভারতীয় সরকার এবং গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’- ‘ডিভাইড এন্ড রুল’ নীতি প্রয়োগ করে প্রধানমন্ত্রী এবং সর্বাধিনায়ক দু’জনকেই হেয় করে তোলা হয়।

তাজুদ্দিনের হঠাৎ করে প্রবাসী সরকার গঠন করে প্রধানমন্ত্রী হওয়াটা আওয়ামী লীগের অনেকেই পছন্দ করেনি। তাদের মধ্যে ছিলেন যুব ও ছাত্রনেতাদের অনেকেই। অনেক সাংসদ এবং আওয়ামী লীগের নেতারাও এর প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ বিরোধিতা করেছিলেন। শেখ ফজলুল হক মনি, সিরাজুল আলম খান, শাহ্‌জাহান সিরাজ, নুরে আলম সিদ্দিকী এবং আব্দুল কুদ্দুস মাখন প্রমুখ যুব ও ছাত্রনেতারা সবাই প্রকাশ্যে তাজুদ্দিনের এ পদক্ষেপের বিরোধিতা করেন। তাদের পরোক্ষভাবে মদদ যোগাচ্ছিলেন জনাব আব্দুর রব সেরনিয়াবাত, শেখ আবদুল আজিজ, মনসুর আলী, জনাব নজরুল ইসলাম প্রমুখ। জনাব তাজুদ্দিনের প্রধানমন্ত্রীত্বের গ্রহণযোগ্যতা সম্পর্কে জেনারেল অরোরার মন্তব্য, “আওয়ামী লীগের যুবনেতারা তাকে পছন্দ করত না।” (বাংলাদেশের যুদ্ধের স্মৃতিচারন শিরোনামে নিখিল চক্রবর্ত্তীকে দেয়া জেনারেল অরোরার সাক্ষাৎকার।)

সাধারণভাবে যুবনেতাদের অনেকেই সেদিন ভেবেছিলেন শেখ মুজিব আর জীবিত নেই। মুজিবর রহমানের অবর্তমানে তাজুদ্দিন তাদের প্রভাবকে তেমন একটা মেনে চলবেন না। শেখ মুজিব কাছে থাকলে এ সমস্ত যুব এবং ছাত্রনেতারা স্বাধীনতা সংগ্রামে তাদের কর্তৃত্ব অতি সহজেই স্থাপন করতে সক্ষম হতেন। কিন্তু তাজুদ্দিন তাদের সাথে অন্য সুরে কথা বলছেন। তাদের হাতে ক্রিয়াণক হয়ে সংগ্রামের সব নেতৃত্ব তাদের হাতে ছেড়ে দিতে তিনি অস্বীকৃতি জানাচ্ছেন। তাদের সংগ্রামী ভূমিকাকেও ছোট করে দেখছেন জনাব তাজুদ্দিন।

সরকার পরিচালনায় যুব ও ছাত্রনেতাদের মতামত তিনি সম্পূর্ণ উপেক্ষা করে চলেছেন। তাজুদ্দিনের ধৃষ্টতার শেষ নেই। তিনি সরকার প্রধান থাকার কারণে তাদের সুযোগ-সুবিধাও বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের আত্মীয়-স্বজনকেও যথাযথ মর্যাদা দান না করে তাদের উপেক্ষা করেছেন। তাদের উপেক্ষা করা, পরোক্ষভাবে শেখ মুজিবকেই উপেক্ষা করার সমতুল্য। অতএব, যে কোন মূল্যে তাজুদ্দিনকে প্রধানমন্ত্রীত্ব থেকে অপসারন করতে হবে। মেতে উঠলেন তারা এক ক্ষমতা লাভের চকক্রান্তে। পরিকল্পনা অনুযায়ী শেখ মনি ও সিরাজুল আলম খানের নেতৃত্বে কয়েকজন যুব ও ছাত্রনেতা দিল্লী গিয়ে ভারতের প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতী ইন্দিরা গান্ধীর সঙ্গে দেখা করে তাকে জানান যে তারা শেখ মুজিবর রহমানের অত্যন্ত বিশ্বাসভাজন।

পাক বাহিনীর হাতে শেখ মুজিবের গ্রেফতারের পেছনে জনাব তাজুদ্দিনের হাত রয়েছে। গ্রেফতারের আগে শেখ মুজিব তাদের সে কথা জানিয়ে তাদেরকে ভারত সরকারের সহায়তায় স্বাধীনতার সংগ্রাম পরিচালনা করার নির্দেশ দিয়ে যান। জনাব তাজুদ্দিনের উপর বাংলাদেশ থেকে আগত বেশিরভাগ আওয়ামী লীগ জাতীয় এবং প্রাদেশিক সাংসদদের সমর্থনও নেই। এ অবস্থায় প্রধানমন্ত্রীত্ব করার কোন অধিকার নেই তাজুদ্দিন সাহেবের। তাদের বক্তব্যের সমর্থনে তারা মুজিবর রহমানের ভগ্নিপতি জনাব আব্দুর রব সেরনিয়াবাতের একটি চিঠি শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধীকে প্রদান করেন এবং শেখ মুজিবের জেষ্ঠ পুত্র শেখ কামালকে তার সম্মুখে উপস্থিত করেন। তারা শ্রীমতি গান্ধীকে এ কথা বলেও হু্ঁশিয়ার করে দেন যে তাজুদ্দিন যদি স্বাধীন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী থাকেন তবে ভারতের স্বার্থও ক্ষতিগ্রস্থ হবে। কারণ জনাব তাজুদ্দিন শেখ মুজিবের নীতি আদর্শ কিছুতেই বাস্তবায়িত করবেন না।

এই পরিপ্রেক্ষিতে দু’পক্ষের স্বার্থে তাদের নেতৃত্বে বাংলাদেশ থেকে আগত মুজিব ভক্ত এবং তাদের অনুগত তরুণদের প্রশিক্ষনের ব্যবস্থা করার জন্য তারা শ্রীমতি গান্ধীর কাছে আবেদন জানান। তারা বলেন, শুধুমাত্র এ ধরণের শক্তি গড়ে তোলার মাধ্যমেই স্বাধীনতা উত্তর বাংলাদেশ এবং বন্ধুরাষ্ট্র ভারতের মধ্যে অর্থবহ সম্পর্ক বজিয়ে রাখা সম্ভব। তা না হলে অচিরেই ভারত বিদ্বেষীদের চক্রান্তের শিকারে পরিণত হবে আওয়ামী লীগ সরকার। তাদের এ অনুরোধ সাগ্রহে গ্রহণ করেন শ্রীমতি গান্ধী। সুদূর প্রসারী নীল নকশার কথা চিন্তা করেই Divide and Rule নীতির প্রয়োগের জন্য বিএলএফ পরবর্তিতে নাম বদলিয়ে মুজিব বাহিনীর সৃষ্টি করে সেকেন্ড ফ্রন্ট খোলার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এভাবেই সৃষ্টি করা হয়েছিল বিএলএফ ওরফে মুজিব বাহিনী।

এ তথ্যগুলোও জনাব ওসমানীকে জানাই আমরা। তিনি সেগুলো জনাব তাজুদ্দিনকে জানান। প্রধানমন্ত্রী জনাব তাজুদ্দিন নাকি এ সমস্ত প্রশ্ন নিয়ে দিল্লীতে ভারত সরকারের সঙ্গে আলোচনা করেন এবং এর প্রতিবিধানের দাবি জানান। কিন্তু জনাব হাকসার, ডিপিধর, ‘র’ এর রমানাথ রাও এবং জেনারেল ওবান সিং এ ব্যাপারে তাজুদ্দিনকে এড়িয়ে গিয়ে নিরব থাকেন। ফিরে এসে কর্নেল ওসমানীকে সে কথাই বলেছিলেন জনাব তাজুদ্দিন। আমরা পরে কর্নেল ওসমানীর কাছ থেকে তার ব্যাখ্যা জানতে পারি। পরবর্তী পর্যায়ে মুজিব বাহিনীকে প্রবাসী বাংলাদেশ সরকারের ফোর্সেস হেডকোয়টার্স এর নিয়ন্ত্রণে আনার আপ্রাণ চেষ্টা করেছিলেন কর্নেল ওসমানী। কিন্তু তার কোন চেষ্টাই ফলপ্রসু হয়নি। নিতান্ত অপারগ হয়েই কর্নেল ওসমানীকে বিএলএফ তথা মুজিব বাহিনী সৃষ্টি করার ভারতীয় সিদ্ধান্ত মেনে নিতে হয়।

ভারতীয় গোয়েন্দা বাহিনীর সহায়তায় ক্যাপ্টেন জলিলের ফোর্ট উইলিয়ামের পূর্বাঞ্চলীয় হেডকোয়াটার্সের কর্মকর্তাদের সাথে গোপন যোগাযোগ থেকে একটি বিষয় পরিষ্কার হয়ে উঠল। ভারতীয় সরকার শুধুমাত্র প্রবাসী সরকার এবং মুক্তি বাহিনীর সদর দপ্তরের মাধ্যমেই বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম এবং রাজনৈতিক গতিধারাকে নিয়ন্ত্রণ করছিল তা নয়, তারা ক্ষমতাধর কমান্ডারদের সাথেও সম্পর্ক গড়ে তোলার চেষ্টা করছিল। অত্যন্ত চতুরতার সাথে তারা তাজুদ্দিনের প্রবাসী সরকারের মধ্যে অর্ন্তদ্বন্দ্ব সৃষ্টি করে তাকেও দুর্বল করে চাপের মুখে রাখছিল যাতে তিনি তাদের নিয়ন্ত্রণের মধ্যে থাকতে বাধ্য হন। অপরদিকে মুজিবনগর সরকার ও মুক্তিযোদ্ধের সর্বাধিনায়ক জনাব ওসমানীর মধ্যেও দ্বন্দ্ব সৃষ্টি করে কর্নেল ওসমানীর ক্ষমতা সীমিত করে রাখা হচিছল একইভাবে। কর্নেল ওসমানীকে সাইড ট্র্যাক করে প্রবাসী সরকার ও ভারতীয় কর্তৃপক্ষের এ ধরণের কার্যকলাপে কর্নেল ওসমানী অতি যুক্তিসঙ্গত কারণেই ভীষণভাবে অপমানিত বোধ করছিলেন। তার বক্তব্য ছিল পরিষ্কার।

ভারত বন্ধুরাষ্ট্র হিসাবে বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে তাদের বক্তব্য অনুযায়ী মানবিক কারণে সাহায্য দিতে সম্মত হয়েছে সেটার জন্য বাঙ্গালী জাতি কৃতজ্ঞ। কিন্তু স্বাধীনতা সংগ্রামটা পূর্ব বাংলার ৮ কোটি বাঙ্গালীর নিজস্ব সংগ্রাম। এ সংগ্রাম তাদেরই সংগঠিত করতে হবে

যে কোন ত্যাগের বিনিময়ে তাদেরকেই অর্জন করতে হবে জাতীয় স্বাধীনতা, সংগ্রামের নেতৃত্ব ও সব দায়িত্বও থাকতে হবে মুক্তিফৌজ কমান্ড ও প্রবাসী বাংলাদেশ সরকারের অধিনে। জনাব ওসমানী নীতির এ প্রশ্নে কখনোই আপোষ করেননি। এ বিষয় নিয়ে তৎকালীন প্রবাসী সরকারের নেতৃত্বের সাথে অনেক বির্তক হয়েছে তার। কিন্তু তার এ নীতির প্রতি সমর্থন দেননি আওয়ামী লীগের বেশিরভাগ নেতৃত্ব ও গণপরিষদ সদস্যরা।

তারা তখন নিজ নিজ ক্ষমতার বলয় তৈরি করতে ব্যস্ত। তাদের প্রায় সবার মাঝেই এক ধরণের উদ্ভট চিন্তা কাজ করছিল। শুধু রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দই নয় অনেক আমলা এমনকি মুক্তিযোদ্ধাদের সুবিধাবাদী নেতৃত্বের মাঝেও সেই একই চিন্তার প্রতিফলন দেখা যাচ্ছিল। তাদের ধারণা ছিল মুক্তিযুদ্ধ যে কারণেই হোক শুরু হয়ে গেছে। প্রতিরোধ সংগ্রামকালে পূর্ব পাকিস্তানের প্রায় সব অঞ্চল থেকে কোটি কোটি টাকা ও সম্পদ লুন্ঠন করে নিয়ে হিজরত করে চলে আসা হয়েছে নিরাপদ আশ্রয় ভারতে।

একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসাবে বলতে লজ্জা লাগলেও বলতে হচ্ছে পূর্ব পাকিস্তান থেকে পালিয়ে আসা অনেক বুদ্ধিজীবি ও হোমরা-চোমরা পদস্থ ব্যক্তিরাও মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বপূর্ণ মুক্তি সংগ্রামকে দেখতেন অত্যন্ত নেতিবাচক দৃষ্টিতে। তারা মনে করতেন বাঙ্গালী মুক্তিযোদ্ধারা কখনই পাকিস্তান হানাদার বাহিনীকে পরাস্ত করে দেশ স্বাধীন করতে সক্ষম হবে না। পাকিস্তান বাহিনীকে পরাজিত করতে সরাসরি ভারতীয় সেনা বাহিনীর হস-ক্ষেপ অবশ্যই অতি প্রয়োজনীয়। রক্তক্ষয়ী দীর্ঘস্থায়ী সংগ্রামে অংশগ্রহণ করার ইচ্ছা অথবা যোগ্যতা তাদের অনেকেরই ছিল না। যুদ্ধের ঝুঁকি এবং কষ্ট ও ত্যাগ স্বীকার করতেও তারা ছিলেন নারাজ। এতে করেই তাড়াতাড়ি 'হজ্জ্ব' শেষ করে প্রবাসী জীবনের কষ্ট থেকে রেহাই পেয়ে দেশে ফিরে লুটপাটের কালো টাকার আয়েশী জীবন খুব তাড়াতাড়ি আবার শুরু করতে পারা যাবে একমাত্র ভারতীয় বাহিনীর প্রত্যক্ষ হস্তক্ষেপের মাধ্যমেই। ভারতে হজ্জ্ব করার স্ট্যাম্প যখন একবার নিতে সক্ষম হয়েছেন তারা তখন দেশে ফেরার পর তাদের রাজ কায়েম করার পথে বাধা কোথায়? তাই যত তাড়াতাড়ি সম্ভব দেশটাকে স্বাধীন করে দেবার জন্য তাদের একাংশ গোড়া থেকেই ভারত সরকারের বিভিন্ন মহলে জোর লবিং শুরু করে দিয়েছিলেন।

সমস্ত প্রবাসী সরকারের মধ্যে শুধুমাত্র দু’জন শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত এ ধরণের উদ্যোগের বিরোধিতা দৃঢ়তার সাথে করে গিয়েছিলেন। তাদের একজন হলেন কর্নেল ওসমানী এবং দ্বিতীয় ব্যক্তি হলেন জনাব খন্দোকার মোশতাক আহমদ। এই দুইজন ছাড়া সিনিয়র রাজনৈতিক নেতৃত্বের প্রায় সবাই এবং আমলাদের উচ্চপদস্থ প্রভাবশালী ব্যক্তিদের অনেকেই ভারতের প্রত্যক্ষ হস্তক্ষেপের মাধ্যমে বাংলাদেশের স্বাধীনতা লাভের পক্ষপাতিত্ত্ব করছিলেন।

পরবর্তিকালে সিজরিয়ন অপারেশন এর মাধ্যমে বাংলাদেশের Premature birth এর জন্য মূলতঃ এরাও দায়ী ছিলেন অনেকাংশে। কিন্তু বেশিরভাগ মুক্তিযোদ্ধা, আমলাতন্ত্রের তরুণ সদস্যরা এভাবে অপরের কৃপায় বাংলাদেশকে স্বাধীন করার উদ্যোগের ঘোর বিরোধী ছিলেন। এ নিয়ে প্রবীণদের সাথে তরুণদের দ্বন্দ্ব ক্রমশঃই বেড়ে উঠছিল প্রতিদিন।
 

Back
Top Bottom